সংবিধান বাংলাদেশের মূল আইন। ২০৯ দিনে প্রণয়ন করা হয় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগে বলা হয়েছে— দেশের বিচার বিভাগের কথা। মূলত সংবিধানের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে সুপ্রিম কোর্ট। রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় বা জরুরি অবস্থাধীনে সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়লেও সাহসী ভূমিকা পালন করেন সুপ্রিম কোর্ট। তাই সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে একমাত্র রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে থাকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ‘আপিল বিভাগ’ এবং ‘হাইকোর্ট বিভাগ’ নামে দুটি বিভাগে বিভক্ত। সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদে আপিল বিভাগের এখতিয়ার ও ১০১ অনুচ্ছেদে হাইকোর্টের এখতিয়ার বর্ণিত আছে। তবে কারও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তাদের প্রতিকার চাইতে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে গুরুত্বপূর্ণ বিধান রাখা হয়েছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমন কাজ কেউ যদি করে থাকেন যেটি সংবিধানবিরোধী, তাহলে প্রতিকার চেয়ে তার সুপ্রিম কোর্টের কাছে আসার সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন এমন অনেক মামলা সুপ্রিম কোর্টে আসছে। ফলে, যখন আদালত দেখতে পান যে, কারও নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তখন তাদের বক্তব্য শুনতে রুল দিতে পারেন। এছাড়া মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করলে, সুপ্রিম কোর্ট শাস্তির প্রদানের মাধ্যমেও অবদান রেখে চলেছেন।’
সাংবিধানিক বিধানগুলো সমুন্নত রাখার বিষয়ে দেশের অন্যতম সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নাগরিকদের ওপরও কিছু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তাই প্রতিকার চাইলেই হবে না। প্রতিকারের বিষয়টি সুরাহা করতে হলে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে মামলা করলে ভালোই প্রতিকার পাওয়া যায়। এটি শুধু দায়িত্ব নাগরিকদেরও। সবাই মিলে কাজ করছে।’
সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের অবদান তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানকে (বাহাত্তরের) কাঁটাছেড়ার মাধ্যমে যেভাবে বিকৃত করা হয়েছিল, তা পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান ব্যবস্থা প্রণয়নে সহায়তা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি এক- এগারোর সময়সহ সংকটের সময় সুপ্রিম কোর্ট অবদান রেখেছে। এছাড়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে কোনও বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় এলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে অবদান রেখে চলেছেন আদালত।’
পরিবেশ রক্ষাসহ অনেক ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্ট অবদান না রাখলে দেশ এতদিনে রসাতলে যেতো বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।