X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

আদালতের রায় উপেক্ষা বাংলাদেশি বাবার, পুলিশি বাধায় জাপানি মা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫৫আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৫৭

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েন চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সম্প্রতি আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার আদেশ দেন বিচারক। তবে সেই রায়কে উপেক্ষা করে বাবা ইমরান শরিফ তার ছোট মেয়েকে নিয়ে আত্মগোপন করেন। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে গুলশান থেকে বাবা ও মেয়েকে হেফাজতে নিয়েছে র‌্যাব। এদিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে বড় মেয়েকে নিয়ে নাকানো এরিকো বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাদের ফিরিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

এর আগে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান মামলাটির রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং শিশুদের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কার কাছে নিশ্চিত হবে তা বিবেচনা করে রায় দেওয়া হয়েছে। দুই সন্তান বাবার কাছে থাকলে মঙ্গল হবে বলে বাদী (ইমরান শরিফ) যে দাবি করেছেন, সেটি প্রমাণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, ওই দুই শিশুর সর্বশেষ বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতেই শিশুরা শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তায় থাকবে বলে অভিমত দেন আদালত। সেই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।

তবে আদালতের রায় উপেক্ষা করে ছোট মেয়েকে তার মায়ের কাছে না দিয়ে তাকে নিয়ে ইমরান শরিফ আত্মগোপনে চলে যান। রায় প্রতিপালনের দায়িত্বে থাকা থানা পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছিলো না। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান থানার কালাচাঁদপুর এলাকা থেকে বুধবার ভোরে র‌্যাব তাদের উদ্ধার করে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে, আদালতের রায় প্রতিপালনে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। সন্তানদের ফিরে পেতে বুধবার আদালতে নতুন করে আবেদন করার কথা ছিল জাপানি মায়ের। তবে মঙ্গলবার রাতে আদালতের রায় অমান্য করে জাপানি মা নাকানো এরিকোও দ্বিতীয়বারের মতো তার বড় মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে তিনি কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তা জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান তিন সন্তানের মধ্যে স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মায় পেতে মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা সেটা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।

এরপর এই দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এসব ঘটনার মধ্যে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর দুই সন্তানের বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন-

আইনে যাই থাকুক, দুই শিশুর কল্যাণের দিকটি দেখেছেন আদালত

জাপানি দুই শিশু নিয়ে রায়: বাবার মামলা খারিজ, মায়ের জিম্মায় দুই শিশু

 

/এএইচ/আরকে/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও আইনজীবীরা, দেখে নেওয়ার হুমকি
শেখ হাসিনাকে অবসরে গান শোনাতেন মমতাজ: পাবলিক প্রসিকিউটর
কিবরিয়া হত্যা ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টার মামলায় সাক্ষ্য দিলেন আরও ৭ জন
সর্বশেষ খবর
অস্ত্রের মুখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা, খালে লাশ ফেলতে আসা দুজনকে গণপিটুনি
অস্ত্রের মুখে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা, খালে লাশ ফেলতে আসা দুজনকে গণপিটুনি
মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যার অভিযোগে শিক্ষক আটক
মাদ্রাসাছাত্রকে হত্যার অভিযোগে শিক্ষক আটক
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
৮ বছর পর আসছে নেমেসিসের নতুন অ্যালবাম
৮ বছর পর আসছে নেমেসিসের নতুন অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি