X
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
১৩ চৈত্র ১৪২৯

আইনে যাই থাকুক, দুই শিশুর কল্যাণের দিকটি দেখেছেন আদালত

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৫আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৫

আইনে যাই থাকুক না কেন, দুই  শিশু কোথায় থাকলে কল্যাণ হবে সে দিকে খেয়াল রেখে তাদের জিম্মা নেওয়ার মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা মায়ের জিম্মায় থাকলে মঙ্গল হবে বলে আদালত মনে করেছেন। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো।

বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফ নিজের দুই সন্তানকে হেফাজতে রেখে যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ আদেশ দেন।

আইন অনুযায়ী, অভিভাবক বলতে বোঝায় যে ব্যক্তি কোনও নাবালকের শরীর বা সম্পত্তির অথবা শরীর ও সম্পত্তি উভয়ের নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত থাকবেন। বাংলাদেশের প্রচালিত আইন অনুযায়ী বাবা-মায়ের তালাক হলে  ছেলে সন্তান সাত বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়োসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে। এক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সবার আগে স্বীকৃত।

রায়ের পর্যাবেক্ষণে বিচারক বলেন, নাবালক বা নাবালিকার হেফাজত নির্ণয়ে তাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল হবে এ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা সর্বাঙ্গীন মঙ্গল তাদের বাবা নাকি মায়ের কাছে নিশ্চিত হবে সে বিষয়টি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জাপানি দুই সন্তান তাদের বাবার কাছে থাকা মঙ্গল হবে বলে যে দাবি করা হয় তা তাদের বাবা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, নাবালিকা দুই শিশুর বসবাস স্থান ছিল জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতে শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তা থাকবে বলে মনে করেন আদালত।

জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

এদিকে প্রকৌশলী ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সন্তানের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান রায় ঘোষণার জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। গত ১৫ জানুয়ারি তাদের বক্তব্য শুনে তা রেকর্ড করেন একই আদালত।

জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান তিন সন্তানের মধ্যে স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা সেটা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।

এরপর এই দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এসব ঘটনার মধ্যে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর দুই সন্তানের বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন- 

জাপানি দুই শিশু নিয়ে রায়: বাবার মামলা খারিজ, মায়ের জিম্মায় দুই শিশু

/এমকেআর/এফএস/
সম্পর্কিত
হাইকোর্ট বলেছেন বন্ধের কথা, জরিমানায় দায় সারে জেলা প্রশাসন
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাই১১ আসামির জবানবন্দিতেও মিলছে না ৩ কোটি টাকা
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যাএকবছরেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত
সর্বশেষ খবর
দেবে গেছে সেতু, মাঝে গর্ত
দেবে গেছে সেতু, মাঝে গর্ত
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরখাস্ত, ইসরায়েলজুড়ে সহিংস আন্দোলন
বিচারব্যবস্থা সংস্কারে অসন্তোষপ্রতিরক্ষামন্ত্রী বরখাস্ত, ইসরায়েলজুড়ে সহিংস আন্দোলন
রমজান কেন সর্বোত্তম মাস?
রমজান কেন সর্বোত্তম মাস?
এখনও আর্জেন্টিনায় খেলার স্বপ্ন দেখেন জামাল!
এখনও আর্জেন্টিনায় খেলার স্বপ্ন দেখেন জামাল!
সর্বাধিক পঠিত
রাজধানীতে আবারও সক্রিয় ‘খড় পার্টি’, টার্গেট নারীরা
রাজধানীতে আবারও সক্রিয় ‘খড় পার্টি’, টার্গেট নারীরা
স্যার না ডেকে ভাই বলায় শিক্ষকের ওপর খেপলেন সরকারি কর্মকর্তা
স্যার না ডেকে ভাই বলায় শিক্ষকের ওপর খেপলেন সরকারি কর্মকর্তা
সোমবার থেকে সরকারি অফিস ও ব্যাংক চলবে নতুন সময়সূচিতে
সোমবার থেকে সরকারি অফিস ও ব্যাংক চলবে নতুন সময়সূচিতে
ইফতার-সেহরি বিক্রিতে ব্যস্ত ওমর সানী ও মাহিয়া মাহি
ইফতার-সেহরি বিক্রিতে ব্যস্ত ওমর সানী ও মাহিয়া মাহি
১০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এখন ৯০ টাকা
১০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এখন ৯০ টাকা