ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক আদর্শে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করেছে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন।
পূর্ব লন্ডন আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘দেশভাগের আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাঙ্গালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।’
গওহর রিজভী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, লাহোর প্রস্তাবে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের যে পরিকল্পনা দেয়া হয়েছিলো, তার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়। তাই তিনি দীর্ঘ ও আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন জাতি ও বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
গওহর রিজভী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শকে ক্ষুণ্ন করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালানো হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করে চলেছেন।’
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন যে সাত কোটি বাঙালিকে কেউ কোনো দিন দাবিয়ে রাখেত পারবে না। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে সব বাধা অতিক্রম করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিখিয়েছেন কীভাবে কারও কাছে মাথা নত না করে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব আসনে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।’
হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বলেন, ‘বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাঁর মহান নীতি ও আদর্শে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে।’
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশি মা-বাবাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজও তারা একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত রয়েছেন।’
আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ এনামুল হক ও টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পিকার শফি আহমেদ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী ও হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আইরিশ, স্কটিশ ও ওয়েলস ভাষার অনুবাদের একটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।
এ ছাড়া লন্ডন মিশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক বিশেষ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে হাইকমিশনার মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেয়া বাণী পাঠ করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতির জন্য বিশেষ দোয়াও করা হয়।