X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২
আজ বিশ্ব ভাস্কর্য দিবস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যের গল্প

আবিদ হাসান
২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০৫আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:৩৬

দেশের যেকোনও ক্রান্তিলগ্নে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে জড়িয়ে আছে এই নাম।

কালের পরিক্রমায় এসব আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বহন করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ইতিহাসকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাস্কর্য তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য তৈরির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্যাতন প্রতিরোধের ইতিহাস।

শুধু তা-ই নয়, দেশ ও জগৎবিখ্যাত মহান মনীষীদের স্মরণ করা হয়েছে ভাস্কর্যের মাধ্যমে। স্থান পেয়েছেন নানান যৌক্তিক দাবি আদায়ে প্রাণ উৎসর্গকারী ছাত্রনেতারাও। এসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু ভাস্কর্য।

আজ বিশ্ব ভাস্কর্য দিবস। প্রতিবছর এপ্রিলের শেষ শনিবার এ দিনটি সারা বিশ্বে পালন করা হয়। সেই হিসাবে ২৯ এপ্রিল দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যগুলো তৈরির নেপথ্যের গল্প।

অপরাজেয় বাংলা

ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নিবেদিত এটি। ভাস্কর্যটি বিষয়বস্তু তিন জন দণ্ডায়মান মুক্তিযোদ্ধা। এটি নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। অপরাজেয় বাংলা নামকরণটি করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী।

১৯৭২ সালে কলা ভবনের সামনে ভাস্কর্যটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কাজ শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। আর ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপরাজেয় বাংলা উদ্বোধন করা হয়। ৬ ফুট বেদির ওপর নির্মিত ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট ও ব্যাস ৬ ফুট। এতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। অপারেজেয় বাংলা। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়। সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের প্রতীক ‘অপরাজেয় বাংলা’।

এর তিনটি মূর্তির একটির ডান হাতে দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেলের বেল্ট ধরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। চোখমুখ স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত। এর মডেল ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা বদরুল আলম বেনু। থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে সাবলীল ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অপর মূর্তির মডেল ছিলেন সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে। আর নারীমূর্তির মডেল ছিলেন হাসিনা আহমেদ। ১৯৭৫ সালের পর অনেক দিন অপরাজেয় বাংলার নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল।

১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পূর্ণোদ্যমে অপরাজেয় বাংলার নির্মাণকাজ ফের শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়। তবে অপরাজেয় বাংলার বেদিতে বা পাদদেশে ভাস্করের নাম খচিত কোনও শিলালিপি নেই। কালক্রমে ভাস্কর্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের অন্যতম পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।

রাজু স্মারক ভাস্কর্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানেই আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। আর সাম্প্রতিক প্রায় সব আন্দোলন শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য’র সামনে থেকে। তবে ভাস্কর্যটির মূল নাম ‘রাজু স্মারক ভাস্কর্য’। কালক্রমে আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর বর্তমানে এই নামে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি লাভ করে।

রাজু ভাস্কর্য। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল চলাকালে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে মিছিলে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজু নিহত হন।

রাজুর স্মৃতি স্মরণে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নিলে বিভিন্ন মহলের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে রাজুসহ সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের সব শহীদের স্মরণে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্যটি। ১৯৯৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ. কে. আজাদ চৌধুরী এটি উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী। তার সহযোগী ছিলেন গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আতাউদ্দিন খান, যিনি আতা খান নামে অধিক পরিচিত। এছাড়া অর্থায়ন করেন মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।

এই ভাস্কর্যে ৮ জনের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাদের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে, তারা হলেন— মুনীম হোসেন রানা, শাহানা আক্তার শিলু, সাঈদ হাসান তুহিন, আবদুল্লাহ মাহমুদ খান, তাসফির সিদ্দিক, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, উৎপল চন্দ্র রায় ও গোলাম কিবরিয়া রনি।

স্বোপার্জিত স্বাধীনতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা স্মৃতি ধারণ করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সড়কদ্বীপের ডাসের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাকস) পেছনে  অবস্থিত এই ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যের এক পাশে একজন কৃষক রয়েছেন, মাঝখানে অস্ত্রধারী নারী ও পুরুষ যোদ্ধা। অপর পাশে আরও দুই মুক্তিযোদ্ধা। ভাস্কর্যটি মাটি থেকে ১৩ ফুট উঁচু, ৮ ফুট ৪ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ১২ ফুট ৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য একটি বেদির ওপরে স্থাপিত হয়েছে।

স্বোপার্জিত স্বাধীনতা। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

ভাস্কর্যের বেদির চারপাশে ৪ ফুট উঁচু দেয়ালচিত্র রয়েছে। দেয়ালচিত্রে স্থান পেয়েছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের নানাদিক। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বুদ্ধিজীবী নিধন, নারী নির্যাতনের মতো বর্বরতা ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের ছবি ও  পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণের ছবি।

‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর শামীম শিকদার। তাকে সহযোগিতা করেছেন হিমাংশু রায় ও আনোয়ার চৌধুরী। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের সড়কদ্বীপে এই ভাস্কর্যের অবস্থান। এটি নির্মাণ করেন ভাস্কর শামীম সিকদার। ভাস্কর্যের নাম ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য।’ ১৯৮৮ সালে শামীম সিকদার ফুলার রোডে অবস্থিত একটি বাংলো স্টাইলের বাড়ির (বর্তমানে প্রো-ভিসির বাসভবন) সামনের পরিত্যক্ত জায়গায় এই ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন। তখন এর নাম ছিল অমর একুশে। ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ শরীফ এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এর উদ্বোধন করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

১৯৯৮ সালে ওই জায়গায় উদয়ন স্কুলের একটি ভবন নির্মাণ শুরু হলে ভাস্কর্যটিকে পাশের সড়কদ্বীপে স্থানান্তর করা হয়। পরে শামীম সিকদার অমর একুশের অবয়ব মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’। একই সঙ্গে তিনি সড়কদ্বীপটিকে নতুন রূপে বিভিন্ন ছোট ছোট ভাস্কর্য দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন।

এই ভাস্কর্যে তিনি উপস্থাপন করেছেন ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের স্বাধিকার আন্দোলন, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান, ২৫ মার্চের কালরাত্রি, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা, ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন। প্রতিটি আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এমন ১৮ জন শহীদের মুখাবয়ব দিয়ে পুরো ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। সবার নিচে রয়েছে ভাষা শহীদের, আর সবার ওপরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যের শীর্ষদেশে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

এছাড়া ত্রিকোণাকৃতির সড়কদ্বীপজুড়ে দেশ-বিদেশের সেরা সব মানুষের আবক্ষ প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব ভাস্কর্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ফকির, জগদীশ চন্দ্র বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শিল্পী এসএম সুলতান, সুভাষ বোস, মহাত্মা গান্ধী, কামাল আতাতুর্ক, রাজা রামমোহন রায়, মাও সেতুং, ইয়াসির আরাফাত, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, কর্নেল এমএজি ওসমানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সিরাজ সিকদার প্রমুখের প্রতিকৃতি। এছাড়া ভাস্কর্যটির তিন কোণে আছে আরও তিনটি প্রতিকৃতি। এর একটি নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নূর হোসেনের।

একটি হাতির চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য ও ভাস্কর শামীম শিকদারের দুটি প্রতিকৃতিসহ ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য’-এ মোট ১১৬টি ভাস্কর্য রয়েছে। শ্বেতবর্ণের এ ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৬০ ফুট। আর পরিসীমা ৮৫ দশমিক ৭৫ ফুট। একটি গোলাকার ফোয়ারার মাঝখানে উপস্থাপিত স্বাধীনতা সংগ্রাম নামের ভাস্কর্যটির আশপাশের ছোট ছোট ভাস্কর্যগুলোর উচ্চতা ৩-৪ ফুট। মূল ভাস্কর্যটির নিচে নামফলকে লেখা রয়েছে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য’।

মধু দা’র ভাস্কর্য। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

মধু দা’র ভাস্কর্য

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত মধুর রেস্তোরাঁ (মধুর ক্যান্টিন)। এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে একাত্তর পূর্ববর্তী সব শিক্ষার্থীর প্রিয় মধু দা’র নাম। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা 'শিববাড়ি এলাকায়' স্ত্রীসহ তাকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর মধু দা’র প্রিয় কর্মস্থল মধুর ক্যান্টিনের সামনেই নির্মাণ করা হয় মধু দা’র ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির গায়ে লেখা রয়েছে 'আমাদের প্রিয় মধু দা' বাক্যটি। এর ভাস্কর হলেন মো. তৌফিক হোসেন খান। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমেদ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন।

দোয়েল চত্বর। ছবি: সংগৃহীত

দোয়েল চত্বর

দোয়েল চত্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে কার্জন হলের সামনে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলের একটি স্মারক ভাস্কর্য। এর স্থপতি হলেন আজিজুল জলিল পাশা। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, যা দেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে।

 শান্তির পায়রা ভাস্কর্য

শান্তির পায়রা ভাস্কর্য

টিএসসির সামনে অবস্থিত ভাস্কর্য ‘শান্তির পায়রা’। এটি নির্মাণ করেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ফটকের সামনে অপরাজিতা চা, মাল্টা চা, মরিচের চা, তেঁতুলের চা-সহ বিভিন্ন ধরনের চা বিক্রি এবং আড্ডা দেওয়ার জন্য জনপ্রিয় খোলা জায়গাটি পায়রা চত্বর নামে পরিচিত। শান্তির পায়রা ভাস্কর্যের নামানুসারেই চত্বরটি পায়রা চত্বর নামে পরিচিতি পেয়েছে।

এছাড়া রাজাকারের প্রতি ঘৃণা জানানোর জন্য ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর  বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে তৈয়ব হাবিলদারের নেতৃত্বে নির্মাণ করা হয় ‘ঘৃণাস্তম্ভ'। ভাস্কর্যের পেছনে এতদিন লেখা ছিল—  এখানে থুতু ফেলুন। এখন সেটা পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে—‘ঘৃণাস্তম্ভে রাজাকারদের ধিক্কার জানান’।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফজলুল হক মুসলিম হলের সাত জন আবাসিক ছাত্র শহীদ হন। তাদের  স্মরণে হল প্রাঙ্গণে নির্মিত হয় ‘সপ্তশহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। ২০১২ সালে ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

টিএসসি থেকে জগন্নাথ হলের দিকে যাওয়ার পথে শামসুন্নাহার হল প্রভোস্ট বাংলোর সামনে রয়েছে ‘জয় বাংলা, জয় তারুণ্য' ভাস্কর্য। একটু সামনে গিয়ে শামসুন্নাহার হল ও জগন্নাথ হলের মাঝে রাস্তার পাশে রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদলের ভাস্কর্য।

শামসুন্নাহার হলের পাশ দিয়ে জগন্নাথ হলে ঢুকেই চোখে পড়ে গণহত্যা স্মৃতিসৌধ। সেখানে রয়েছে শহীদ অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, শহীদ অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, শহীদ অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যের ভাস্কর্য। তার থেকে একটু সামনে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে ছাত্রলীগ নেতা জয়দীপ ভট্টাচার্যের ভাস্কর্য। তার ঠিক সামনে অবস্থিত সোনালি প্রলেপে তৈরি বৌদ্ধ মূর্তি। একটু সামনে এগোলোই দেখতে পাওয়া যাবে স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারির সামনেই চোখে পড়ে শিল্পাচার্য জয়নুলের ভাস্কর্য। এছাড়াও চারুকলা এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু ভাস্কর্য। এরমধ্যে রয়েছে চারুকলার শিক্ষক অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের ভাস্কর্য প্রাচ্যকলার সামনে। এসব ভাস্কর্যে বাংলার মানুষের জীবনাচার ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুপুর আক্তার বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০ দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলনের সূতিকাগার আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেহেতু প্রত্যেকটি ভাস্কর্যের পেছনে রয়েছে একেকটি সংগ্রামের আত্মকাহিনি। ভাস্কর্যগুলো জড়বস্তু হলেও, মাথা উঁচু করে বলে যাচ্ছে প্রতিবাদ এবং ত্যাগের কথা। তবে সব ভাস্কর্যের ইতিহাস এবং তথ্য সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাচ্ছে না বলে আমার মনে হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে ভাস্কর্যগুলোর মাহাত্ম্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক লালা রুখ সেলিম বলেন, ‘সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে ভাস্কর্য। এর ইতিহাস সভ্যতার ইতিহাসের সমপর্যায়ের। আর এই ভাস্কর্যের সুবিধা হলো—এটি উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান করতে পারে, যা শিল্পের অন্য অনেক মাধ্যম পারে না। আর এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরাসহ নানান প্রতিবাদের মাধ্যমে হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বার্তা দেওয়ার জন্যও এটি হচ্ছে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।’

/এপিএইচ/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘শব্দকথা সাহিত্য উৎসব-২০২৪’ উদযাপন
নতুন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানগুরুত্ব পাচ্ছেন শেরেবাংলা, ভাসানী ও জিয়া
ভারতের স্কুল-কলেজে একাত্তর ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কী পড়ানো হয়
সর্বশেষ খবর
তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ফিরে হিটস্ট্রোকে যুবদল নেতার মৃত্যু
তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ফিরে হিটস্ট্রোকে যুবদল নেতার মৃত্যু
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে ভারত-পাকিস্তান
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে ভারত-পাকিস্তান
টেকনাফে ‘জিম্মিঘর’ থেকে ১৪ অপহৃত উদ্ধার
টেকনাফে ‘জিম্মিঘর’ থেকে ১৪ অপহৃত উদ্ধার
পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে তামিম ইকবাল, বললেন ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না, স্পোর্টসম্যান’
চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে তামিম ইকবাল, বললেন ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না, স্পোর্টসম্যান’
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ