গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ডেরঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নারীপক্ষ। শনিবান (২১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অঞ্জলি লহো মোর’ ভাস্কর্যটি উপাচার্যের সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়। এর মাত্র দুই দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর আগে ঢাকায় একুশের বইমেলায় দোকান ভাঙচুর, সাতক্ষীরায় বইমেলায় উদীচীর স্টলে হামলা ও ব্যানার পুড়িয়ে ফেলা, টাঙ্গাইলে ফুলের দোকান ভাঙচুর ও লালন উৎসব বন্ধ করা, ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব স্থগিত করা, ঢাকার উত্তরা ও চট্টগ্রামে বসন্ত উৎসবে হামলা করে বন্ধ করা হয়। এছাড়াও কুম্ভমেলাসহ আরও অনেক মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। একের পর এক ভাঙা হয়েছে মাজারে, বন্ধ করা হয়েছে গান-বাজনা। এ ধরনের কার্যকলাপ সমাজের সৃজনশীলতা ও দেশের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করে।
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আবহমান সংস্কৃতি ধ্বংসকারী এ সব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নারীপক্ষ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
২৪-এর জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর গণভবন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু যাদুঘরসহ দেশের অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এ সবই ছিল শেখ হাসিনা সরকারের আওয়ামী দুঃশাসনে অতিষ্ঠ ক্ষুব্ধ মানুষের বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বা রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ, তাহলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনও পর্যন্ত চলতে থাকা এ ধরনের হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার কেন কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
গত জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হতে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও উদ্বিগ্ন। সরকারের কাছে নারীপক্ষর দাবি, আর যাতে এ ধরনের কোনও হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা না ঘটে এবং একটিও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বা ঐতিহ্যবাহী মেলা বন্ধ না হয়, তার জন্য এখনই কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিন। সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বা যেকোনও ধরনের অপশক্তির চাপের ঊর্ধ্বে থেকে একটি বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করুন।