X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশে যানবাহনের তীব্র সংকট, তদন্তে যেতে হয় নিজ খরচে

কবির হোসেন
১০ মে ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ০৯:৩১

দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ বাহিনী। আইনি যেকোনও সমস্যা, সংকট বা বিপদে নাগরিকদের প্রথম ভরসা বাংলাদেশ পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তায় শহর থেকে গ্রামে সবখানে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’ এই স্লোগান নিয়ে নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে বাহিনীটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ধরনের ইউনিট। তবে যানবাহন, স্বাস্থ্য, জনবল ও লজিস্টিকসহ নানা সংকটে জর্জরিত বিশাল এই বাহিনী। সেসব সংকট নিয়েই বাংলা ট্রিবিউনের সিরিজ প্রতিবেদন ‘পুলিশের কষ্ট’।

দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও অভ্যন্তরীণ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ পুলিশ। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ, মামলা গ্রহণ, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা, বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা, ভিআইপি নিরাপত্তা ও প্রটোকলসহ প্রতিটি সেক্টরে পুলিশের নানামুখী সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এখনও পুলিশের অন্যতম সমস্যা যানবাহন। পাশাপাশি ঘাটতি রয়েছে অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্টেরও।

পুলিশ সদস্যদের বক্তব্যেই এমন সমস্যার বিষয় উঠে এসেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় পুলিশের ২৬০ জনের একটি টিম কাজ করছে। অথচ তাদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে মাত্র সাতটি। এর মধ্যে একটি গাড়ি বরাদ্দ ওসির জন্য। একইভাবে শাহবাগ থানায় ১৯৩ জনের জন্য গাড়ি  আছে আটটি, ধানমন্ডি মডেল থানায় ১৩৬ জনের জন্য গাড়ি বরাদ্দ ছয়টি। মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য রয়েছেন ১৯৬ জন, সেখানে গাড়ি রয়েছে মাত্র ৯টি। এছাড়া প্রতিটি থানায় সর্বোচ্চ দু’জন পুলিশ সদস্যকে মোটরসাইকেল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও পুলিশ ইন্সপেক্টরের জন্যও মোটরসাইকেল বরাদ্দ নেই।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য থানাগুলোর চিত্রও একই। থানায় দায়িত্বরত পুলিশের সংখ্যার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা একেবারে সীমিত। প্রায় সময় নিজেদের খরচে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের।

ডিএমপির বিভিন্ন থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা জানান,প্রায় প্রতিটি থানাতেই রয়েছে যানবাহন সংকট। এ কারণে লেগুনা, মাইক্রোবাস, সিএনজি-চালিত অটোরিকশা, কিংবা অন্যান্য যানবাহন রিকুইজিশন করে টহল দিতে হয়। প্রায় প্রতিটি থানাতেই অফিসার ইনচার্জের (ওসি) জন্য একটি এবং অতিরিক্ত আরেকটি গাড়ি থাকে। অতিরিক্ত গাড়িটি দিয়ে কর্মকর্তারা টহলসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ রোধে সবসময়ই সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় একাধিক টিমকে টহলে থাকতে হয়। রিকশা কিংবা অন্যভাবে ম্যানেজ করা যানবাহন ব্যবহার করে অভিযানে যেতে হয় পুলিশ সদস্যদের। কখনও ভাড়ায় গাড়ি নিতে হয় এবং সেই ভাড়া নিজেদের পকেট থেকে গুনতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে না পারাসহ নানামুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকে।

জানা গেছে, থানার জন্য বরাদ্দকৃত অন্য গাড়িগুলো সংশ্লিষ্ট থানার বিভিন্ন বিট পুলিশ বা ফাঁড়ি একটি করে ব্যবহার করে থাকে। ফাঁড়িতে দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর (অপারেশন) ও ইন্সপেক্টরের (তদন্ত) জন্য আলাদা গাড়ি বরাদ্দ থাকে। ধানমন্ডি মডেল থানা ও কলাবাগান থানাসহ রাজধানীর প্রায় বেশিরভাগ থানা সরেজমিনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন থানায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর জোনের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) দেবাশীষ কর্মকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থানায় যে কয়টি গাড়ি বরাদ্দ আছে, সেটা পর্যাপ্ত নয়। আটটি গাড়ি আটটি বিটে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অফিসার ইনচার্জ এবং টহল গাড়ি ছাড়া, দুই পুলিশ পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) জন্য আলাদা কোনও গাড়ি বরাদ্দ নেই।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত। তিনি জানান, অনেক অভিযানে ভাড়া করা সিএনজি ও প্রাইভেট কারে গন্তব্যে যেতে হয়। ভাড়াটাও মাঝেমধ্যে নিজেদের বহন করতে হয়।

ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর পর আমাকে ছুটতে হয় থানার বিভিন্ন এলাকায়। যাতায়াতের জন্য বেশিরভাগ সময় মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়, কখনও রিকশা। অনেক সময় রিকশা দিয়ে সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যায় না। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা অপারেশন ও তদন্তের দায়িত্বে আছেন, তাদের জন্য আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করা উচিত।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সুমন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে, টহলের জন্য ভাড়ায় গাড়ি নিতে হতো না। শহরের ভেতরে যখন টহল দেই, তখন মোটরসাইকেল নিয়েই বের হই। আর শহরের বাইরে যখন কোনও ইউনিয়ন বা গ্রামে যাই, তখন টহলের জন্য বরাদ্দ গাড়ি বা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। দেখা যায়, সে সময় থানার অন্য অফিসার তার প্রয়োজনে আর গাড়ি পান না।

রাজধানীর শাহবাগ থানার এসআই আরিফ বলেন, ‘বিভিন্ন সময় মামলার তদন্তে কিংবা অফিসিয়াল কাজে যেতে হলে— থানা থেকে কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। কখনও থানার নিজস্ব গাড়ি পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ সময়েই ভাড়া গাড়ি নিয়ে টহলে যেতে হয়। কয়েকদিন আগে দু’টি মামলার তদন্ত কাজ করতে গিয়ে নিজের পকেট থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, এই টাকা কে দেবে? ২৮ বছরের চাকরি জীবনে সরকারি কোনও মোটরসাইকেল পাইনি। নিজেরা কিনলেও সেটার জ্বালানি থানা কিংবা সরকার থেকে দেওয়া হয় না।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্টের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এখন যেহেতু প্রযুক্তির সময়, যখনই কোনও নতুন কিছু আসছে, আর সেটি সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। আমাদের অনেক কিছুই ছিল না। আস্তে আস্তে সবকিছুই হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনে সরকারের কাছে যা কিছু চাওয়া হচ্ছে, সরকার সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছে। অন্যান্য বিষয়গুলোর মতোই যানবাহনের সমস্যাও আশা করি অচিরেই সমাধান হবে।’

প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে থানা কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়াতে উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় যানবাহনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার বিষয়ও  চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

আরও পড়ুন:

/জেইউ/ইউএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৬
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু: ওসি-চিকিৎসকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সর্বশেষ খবর
মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি দেওয়া সেই প্রার্থী হেরেছেন
মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি দেওয়া সেই প্রার্থী হেরেছেন
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৬
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৬
চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘সাম্রাজ্যের’ অনুসন্ধান চেয়ে রিট
যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘সাম্রাজ্যের’ অনুসন্ধান চেয়ে রিট
সর্বাধিক পঠিত
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’