রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে দিনভর যাত্রীর উপস্থিতি ঢিলেঢালাভাবে থাকলেও সন্ধ্যা থেকে ঢল নামতে শুরু করে ঈদে দক্ষিণাঞ্চলে ঘরমুখী মানুষের। বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পর সন্ধ্যা থেকে ডেক-কেবিন প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে আসে বিভিন্ন রুটের লঞ্চগুলোর। শেষ কর্মদিবসে এমনটাই ছিল সদরঘাটের চিত্র।
সোমবার (২৬ জুন) বিকাল থেকে সন্ধ্যা (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারা দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে যাত্রীদের উপস্থিতি কম থাকায় অনেকটায় হতাশ ছিল লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে যাত্রীদের চাপ থাকার কথা থাকলেও বিকাল পর্যন্ত তার রেশ মাত্র ছিল না। তবে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় সদরঘাটের দৃশ্য। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় টার্মিনাল ও পন্টুন এলাকা। লঞ্চগুলোতেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় আজ শেষ কর্মদিবসে অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। নিয়মিত চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কেবিনের অগ্রিম টিকিট প্রায় শতভাগ বিক্রি আগেই শেষ হয়েছে। তবে সব রুটেই কমবেশি লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় এখনও কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। যদিও কেবিনের তুলনায় ডেকের যাত্রীর চাপই বেশি বলে জানান তারা।
ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি প্রিন্স আওলাদ’-এর সুপারভাইজার হৃদয় বলেন, ‘আমাদের লঞ্চের শতভাগ কেবিন বুকড ছিল। আজ শুধু ডেক আর সোফার টিকিট দিচ্ছি। যাত্রীর চাপ সারা দিন ছিল না। এখন যা অবস্থা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লঞ্চ ছাড়তে পারবো।’
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহীদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘শেষ কর্মদিবস হওয়ায় যাত্রীর চাপ বিগত কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। মূলত অফিস শেষ করে সবাই সদরঘাটে আসছে। তারপর গার্মেন্টও ছুটি হয়েছে। রাত ৯-১০টা পর্যন্ত যাত্রী আরও বাড়বে আশা করছি। আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত আছে, যাত্রী বাড়লে লঞ্চও বাড়ানো হবে।’
এদিকে টিকিটের ঘাটতি না থাকায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। অনেকেই অগ্রিম টিকিট বুকিং দিয়ে রাখায় পরে এলেও ঝামেলা পোহাতে হয়নি। লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় যাত্রীরা ঘাটে এসেও টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। টার্মিনাল এলাকাতেও তেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রীদের।
মতিঝিল থেকে পরিবার নিয়ে আসা বরিশালগামী যাত্রী সানোয়ার হাসান বলেন, ‘অগ্রিম কেবিন বুকিং করে রেখেছিলাম। অফিস ছুটি হওয়ার পরপরই পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। বৃষ্টি থাকায় একটু আগেভাগেই এসেছি। তেমন ভোগান্তি হয়নি। এখন সুন্দরভাবে বাড়িতে পৌঁছাতে পারলেই হয়।’
খিলগাঁও থেকে আসা সরকারি চাকরিজীবী হাসনাত পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি বরগুনা যাবো। যাওয়ার কথা ছিল ২৮ তারিখ, ওই দিনের জন্য কেবিন বুকিং করা ছিল। কিন্তু ইমার্জেন্সি হওয়ায় আজ যেতে হচ্ছে। ঘাটে এসে কেবিন পাবো কিনা চিন্তায় ছিলাম, তবে কেবিন পেয়েছি, ভাড়াও স্বাভাবিক।’
যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে লঞ্চ চলাচল করবে বলা জানানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত বয়া-জ্যাকেটের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিওটিএ।
বিআইডব্লিওটিএ’র যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ যাত্রীচাপ আগের থেকে বেড়েছে। চাপ অনুযায়ী লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের মনিটরিং টিম ঘাটে অবস্থান করছে, কোনও লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান খান বলেন, ‘ঘাটে শেষ কর্মদিবস হিসেবে আজ চাপ বেশি। পুলিশ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় র্যাবের একটি টিম ও বিশেষ ফোর্স আলাদাভাবে কাজ করছে। আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।’