X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে চিড়িয়াখানায়

আসাদ আবেদীন জয়
০৩ জুলাই ২০২৩, ১৮:৪৬আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৯:০৭

সম্প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে হায়েনার কামড়ে হাত হারিয়েছে দুই বছর বয়সী এক শিশু। এমন ঘটনায় সেখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর নড়েচড়ে বসে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাই ঈদুল আজহার আগেই হিংস্র প্রাণীদের খাঁচার বাইরে উঁচু বেষ্টনী দিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে। একই সঙ্গে মাইকিং করে দর্শনার্থীদের সচেতন করার উদ্যোগও নেয় তারা।

মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় সরেজমিন দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কর্তৃপক্ষ কাজের অগ্রগতি বাড়াচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা। একই সঙ্গে তারা দর্শনার্থীদের সচেতনতার কথাও উল্লেখ করেন।

এ সময় দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, নিজেদের অসচেতনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। নিজেরা সচেতন থাকলেই নিরাপদে থাকা যায় বলে জানান দর্শনার্থীরা।

একটু পরপর মাইকে বলে দিচ্ছে যাতে খাঁচার কাছে কেউ না যায়

গাজীপুর থেকে সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বাবু শেখ। নিরাপত্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমি জানি, এটা খুবই মর্মান্তিক। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে এসেছি এখানে। তাই নিজ থেকেই সাবধানে ছিলাম। আর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকেও দেখলাম নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। খাঁচাগুলো থেকে মানুষকে দূরে রাখতে বেষ্টনী দিচ্ছে। 

ভাগ্নেকে নিয়ে বেড়াতে আসা সুকুমার রায় বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে নিরাপত্তা ঠিকই আছে। আসলে আমরা অসচেতন থাকলেই দুর্ঘটনা ঘটে। তারা (চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ) ঠিকই আছে। তারা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে। আবার একটু পরপর মাইকে বলে দিচ্ছে যাতে খাঁচার কাছে কেউ না যায়।

তবে কর্তৃপক্ষ থেকে কোনও বাড়তি নিরাপত্তা চোখে পড়েনি

আজিমপুর থেকে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসা সাইফ উদ্দিন জানান, চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা আগের মতোই আছে, কোনও পরিবর্তন নেই। কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরে আমরা অভিভাবকরা সচেতন হয়েছি, যাতে বাচ্চারা খাঁচার কাছে না যায়। কর্তৃপক্ষ থেকে কোনও বাড়তি নিরাপত্তা চোখে পড়েনি। আর যে ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য অবশ্যই কর্তৃপক্ষ দায়ী। এখন তাদের উচিত ছিল সব না হলেও অন্তত যেসব খাঁচা বেশি বিপজ্জনক সেসব খাঁচার সামনে একজন করে লোক রাখা। কিন্তু এটা আমি দেখিনি। আগে যা ছিল, এখনও সে রকমই আছে।

গাজীপুর থেকে ঘুরতে আসা সমীর কুমার বলেন, আমি কিছু খাঁচায় দেখেছি এক্সট্রা তারের ব্যারিকেড দিয়েছে। এটা দেওয়ায় ভালো হয়েছে। কারণ, এখন চাইলেও কেউ আর খাঁচার ভেতর হাত দিতে পারবে না। আমার মনে হয় এটাই কার্যকর হবে। আর আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। যে এক্সিডেন্টটা, সেটা আসলে অসচেতনতার কারণে হয়েছে।

কিছুদিন আগে চিড়িয়াখানায় হায়েনা এক শিশুর হাত কেড়ে নিয়েছিল

সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয় জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে চিড়িয়াখানায় হায়েনা এক শিশুর হাত কেড়ে নিয়েছিল। তার চিকিৎসার সব ব্যয় আমরা বহন করছি। তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ জুন শিশুটি আবার এসেছিল ড্রেসিং করার জন্য। তখন আমাদের অফিসাররা সঙ্গে ছিল। তাকে টিকা দেওয়ার যে বিষয় রয়েছে, অফিসাররা সঙ্গে থেকেই করছে। তার হাত অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে। তবে ডাক্তার বলেছে ঈদের পরে তাকে আবার আসার জন্য। প্রতিবারই আমাদের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য চিড়িয়াখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হয়েছে। আর চিন্তাভাবনার ফসল হচ্ছে আমরা বেশ কিছু খাঁচার সামনে তারের উঁচু ব্যারিকেড করে দিয়েছি। এটা যতগুলো হিংস্র প্রাণী আছে, সব প্রাণীর খাঁচাতেই করা দরকার। সে লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি।

নিরাপত্তাবেষ্টনী অতিক্রম করে এক শিশু চলে যাচ্ছিল ভালুকের খাঁচার কাছাকাছি

হিংস্র প্রাণীদের খাঁচার সামনে নিরাপত্তার জন্য কর্মী রাখার ব্যাপারে এই পরিচালক বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানায় ২০টি হিংস্র প্রাণীর খাঁচা রয়েছে। ২০টি খাঁচার সামনে আলাদা লোক রাখতে পারিনি। মোট যে জনবল আছে, সেটা কথা চিন্তা করলে সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা ফিজিক্যাল নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এ জন্য যেখানে ফিজিক্যাল ব্যারিয়ার উঁচু করে দেওয়া দরকার, সেখানে নেটের বেড়া দিয়ে উঁচু করে দিয়েছি। আর অন্য খাঁচাগুলোয় চেষ্টা করেছি সার্বক্ষণিক এনিমেল কেয়ারটেকার রাখার জন্য। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এখনও কিছু খাঁচার সামনে দেওয়া ব্যারিকেডের ভেতরে শিশুরা ঢুকে পড়ছে কিন্তু কোনও নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা যায়নি, এমনটা জানালে রফিকুল ইসলাম বলেন, হিংস্র প্রাণীগুলোর যে খাঁচা রয়েছে, সেগুলো অনেক বড়। তাই এর এক পাশে নিরাপত্তাকর্মী থাকলে অপর পাশে দেখা যায় না। এ কারণে দর্শনার্থী বা শিশুরা ঢুকে পড়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উৎসুক দর্শনার্থী এ রকমভাবে প্রবেশ করছে, এটা ঠিক না। এ ক্ষেত্রে যখন আমাদের কর্মীদের নজর পড়ছে, তারা বারণ করছে, সচেতন করছে।

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে চিড়িয়াখানায়

কত দিনের মধ্যে চিড়িয়াখানাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা যাবে, এমন প্রশ্নে পরিচালক বলেন, সব হিংস্র প্রাণীর খাঁচার বেষ্টনীগুলোকে আমরা উঁচু করতে চাই। এ জন্য আমাদের সময় ও অর্থের প্রয়োজন। কেবল নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি এই অর্থবছরেই এসব কাজ করতে পারবো। আমরা আশাবাদী যেই দুর্ঘটনা ঘটেছে, এ রকম কিছু আর সামনে ঘটবে না। তারপরও বলবো যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, তার মূলে ছিল অসচেতনতা।

চিড়িয়াখানার প্রতিটি খাঁচার সামনে লেখা আছে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী অতিক্রম করবেন না। কিন্তু দর্শনার্থীরা তা মানছেন না।

ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিনোদন করতে আসা দর্শনার্থীদের আরও সচেতন হতে হবে। আমরা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাবো। কিন্তু দর্শনার্থীদেরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
মুঠোফোন কানে, ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে