X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার টাকায় বিলাসবহুল বাড়ি, বিপ্লব লস্করের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নুরুজ্জামান লাবু
০৯ আগস্ট ২০২৩, ২৩:০০আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ২৩:০০

প্রতারণা করাই ছিল তার পেশা। ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রথমে পরিচয়। তারপর বন্ধুত্বের ফাঁদ। বিদেশ থেকে উপহার পাঠানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এই ছিল তার কৌশল। নিজেই প্রতারণার একটি চক্র গড়ে তুলেছিল সে। বিপ্লবের নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা দীর্ঘ দিন ধরে শত শত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণার টাকায় ঢাকার উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জে তিন তলা বিলাসবহুল বাড়িও বানিয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। সেই বিপ্লবের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সঙ্গে তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বলেন, কেরানীগঞ্জ থানার একটি মামলায় বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিপ্লব লস্করের বাড়ি গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া বিপ্লব লস্কর এক সময় বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কুলির কাজ করতো। ২০০০ সালে ঢাকায় এসে মিরপুর এলাকার ফুটপাতে গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। সে সময় তার সঙ্গে কয়েকজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে একটি প্রতারণা চক্র গড়ে তোলে।

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুত্বের মাধ্যমে প্রতারণা, জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার টাকায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদও গড়ে তুলেছে। প্রকাশ্য কোনও আয়ের উৎস না থাকলেও বিপ্লব লস্করের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনেদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির টাকায় সে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনেছিল।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশি সহযোগীদের মাধ্যমে অনলাইনে প্রতারণায় লিপ্ত। এরই ধারাবাহিকতায় বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অবৈধ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে অন্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিতো। উপহার দেওয়ার নামে বিদেশিদের প্রতারণা, হ্যালো পার্টি, অবৈধ পণ্য বিক্রি, অপহরণ ও মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের টাকা এসব অ্যাকাউন্টে জমা হতো। প্রতারণার সঙ্গে সঙ্গে দেশি-বিদেশি অপরাধীদের এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়ার মধ্যস্ততা করে দিতো বিপ্লব। বিনিময়ে অন্যান্য চক্রের প্রতারণা করে হাতানো অর্থের একটি অংশও সে পেতো। এভাবে শত শত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়ায় খাটানোর মধ্যস্ততা এবং প্রতারণার মাধ্যমে মাত্র এক যুগেই কুলি থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, বিপ্লব লস্করের নেতৃত্বাধীন এই চক্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অর্থ খুইয়েছেন এমন শতাধিক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রাশিদুল হক নামে এক ব্যক্তি খুইয়েছেন ৪৮ হাজার টাকা, ইতি রানী দেবনাথ নামে এক নারী ডাচবাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, নুর আজিম রুমি নামে এক ব্যক্তি খুইয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, পারভীন আক্তার ২ লাখ টাকা, আরিফুল ইসলাম ১ লাখ ৪৫ হাজার, রুহুল আমিন ৩ লাখ টাকা, ফখরুল ইসলাম দেড় লাখ টাকা খুইয়েছেন।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতারক চক্রটি সাধারণত মধ্যবয়সী ও উচ্চবিত্ত নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করতো বেশি। এরপর চক্রের বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে বন্ধুত্ব স্থাপন করে উপহার পাঠানোর নামে হাতিয়ে নিতো টাকা। টাকা-পয়সা নেওয়ার পুরো কাজটি করতো বিপ্লব লস্কর নিজে। তার অন্যতম সহযোগী হলো কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার হামিদুর রহমান। হামিদুরের ছবি ও এনআইডি কার্ড দিয়ে অর্ধ শতাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে অর্থ নিয়েছে বিপ্লব লস্কর। প্রতি এক লাখ টাকা লেনদেনে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো হামিদুর রহমানকে। হামিদুরের স্ত্রী রুমা আক্তারও এই চক্রের সদস্য ছিল। রুমা নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের ফোন করে বিদেশ থেকে আসা উপহারের কাস্টমস ফি নির্ধারণ করে দিতো। সরল বিশ্বাসে কিংবা লোভে পড়ে কেউ ভুয়া কাস্টমস ফি’র টাকা পরিশোধ করলে জানানো হতো তাতে অবৈধ মালামাল আছে। টাকা না দিলে পুলিশকে জানানো হবে। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল অর্থ ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, বিপ্লব লস্করের পাশাপাশি তার অন্যতম প্রধান সহযোগী হামিদুর রহমান, রুমা আক্তার, আলাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও হেলাল মিয়ার নামেও আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
প্রত্যেক বস্তা থেকে সরানো হয় চাল, ডিলারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মেটাল কয়েনের ফাঁদে ফেলে যেভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি
সর্বশেষ খবর
খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
কেমন চলছে ১৪ দলীয় জোট?
কেমন চলছে ১৪ দলীয় জোট?
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
‘সরকারকে যারা চাপ দেবে তারা নিজেরাই যথেষ্ট চাপে রয়েছে’
‘সরকারকে যারা চাপ দেবে তারা নিজেরাই যথেষ্ট চাপে রয়েছে’
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম