X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১
স্বামীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা

প্রাণভিক্ষা চেয়েও রেহাই পাননি ফাতেমা

মহিউদ্দিন খান রিফাত
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:০৭আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:২৮

পারিবারিকভাবে ১৯ বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। ১৮ বছরের একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে সংসারে। কিন্তু যৌতুকের বলি হওয়া থেকে বাঁচতে পারেননি এক নারী। প্রাণভিক্ষা চেয়েও রেহাই মেলেনি তার। সরকারি কর্মকর্তা স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেন শান্তর হামলায় গুরুতর আঘাত পেয়ে প্রাণ হারান ফাতেমা নাসরিন (৪৫)। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।  

মির্জা সাখাওয়াত হোসেন শান্ত ২১তম বিসিএস কর্মকর্তা, কাজ করছিলেন পিডব্লিউডিতে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বিয়ের পর থেকেই ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিলেন সাখাওয়াত। গত ৮ মার্চ শবে বরাতের রোজা রেখে রান্নাঘরে ইফতার তৈরি করছিলেন ফাতেমা। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করে স্বামী সাখাওয়াত। প্রাণভিক্ষা চেয়েও বাঁচতে পারেননি ফাতেমা। গুরুতর ওই আঘাতে ১৭ মার্চ দিনগত রাত ১টার দিকে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ফাতেমার বড় বোন আরজিনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর সাখাওয়াতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ১৮ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন।

তোফাজ্জল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আসামি মির্জা সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ২০ জনকে।’

এছাড়া মির্জা সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে পঞ্চগড়ে ফাতেমা নাসরিনের করা একটি যৌতুকের মামলা চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চার্জশিটে বলা হয়, বিয়ের পর থেকে মির্জা সাখাওয়াত হোসেন শান্ত তার স্ত্রী ফাতেমা নাসরিনের কাছে যৌতুক চাইতো। বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও শহরে ফাতেমার পৈতৃক জমি বিক্রি করে তাকে এক কোটি টাকা যৌতুক এনে দিতে বলতো। ফাতেমা তার পৈতৃক জমিতে পরিবারের সবার অংশীদারিত্বের বিষয়টি সাখাওয়াতকে জানালেও সে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে ফাতেমা পঞ্চগড় সদর থানায় যৌতুক আইনে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে একটা মামলা করেন। এরপর ঘটনার সত্যতা পেয়ে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। পরে সাখাওয়াত সংসার করার শর্তে আদালত থেকে জামিন নেয়। জামিনে বের হয়ে দাবিকৃত যৌতুকের এক কোটি টাকার জন্য আবারও ফাতেমাকে নির্যাতন করতে থাকে।

যেভাবে হত্যা করা হয় ফাতেমাকে

গত ৮ মার্চ ফাতেমা রোজা রেখেছিলেন। মোহাম্মদপুর থানার হুমায়ুন রোডের ভাড়া বাসায় রান্নাঘরে ইফতার বানাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় সাখাওয়াত পঞ্চগড়ে তার মালিকানাধীন ‘মির্জা বোর্ডিং’ নামের আবাসিক হোটেলটি বড় করার জন্য টাকা চায়। ফাতেমা প্রতিবাদ করলে ঝগড়া শুরু হয়। বাবা-মায়ের চিৎকার শুনে তাদের মেয়ে (১৮), ফাতেমার ফুফাতো বোন ও তার মেয়ে (১৭) বের হয়ে আসে। ঝগড়ার একপর্যায়ে সাখাওয়াত এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি ও লাথি মারতে মারতে রান্নাঘরের সামনের মেঝেতে ফেলে দেয় ফাতেমাকে। পরে ধারালো বঁটি এনে তা দিয়ে ফাতেমার গলা কাটার চেষ্টা করে। এ সময় অন্যরা বঁটি কেড়ে নেয়। ফাতেমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকায় ফোন করে আত্মীয়স্বজনদের ঘটনা জানায় তার মেয়ে।

তখন আবার সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় লাথি মারতে থাকে এবং রান্নাঘর থেকে মসলা বাটার কাঠের বাটলা এনে সেটা দিয়ে তার মাথা, হাত ও পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আঘাতে ফাতেমার মাথা, হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে যায়। অজ্ঞান অবস্থায় তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ফাতেমা মারা গেছে ভেবে নিজের রুমে চলে যায় সাখাওয়াত।

এই ঘটনার পর একই ভবনে বসবাসরত ফাতেমার ভাই মহিউদ্দিন মোহাম্মদ, মাসউদুর রহমান ও তার স্ত্রীসহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। তারাই ফাতেমাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ডাক্তাররা তাকে আগারগাঁও নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে ডাক্তাররা জানান—ফাতেমার মাথার খুলির পেছনের হাড় ভেঙে গেছে এবং ব্রেনের উভয় পাশে রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় আছে। পরে অপারেশন করা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ মার্চ তিনি মারা যান।

চার্জশিটে যা বলা হয়েছে

তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে আসামি সাখাওয়াতকে ‘চরিত্রহীন, লম্পট, বাটপার ও যৌতুকলোভী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রথম স্ত্রী ফাতেমা নাসরিনের অনুমতি ছাড়াই জৈতুন বেগম নামে এক মেয়েকে বিয়ে করে সাখাওয়াত। সে লোভের বশবর্তী হয়ে ফাতেমাকে প্রতিনিয়ত যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। সে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে অমানবিকভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করে ফাতেমাকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এর ফলে ফাতেমার মৃত্যু হয়।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি  মির্জা সাখাওয়াত হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩)-এর ১১(ক) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ফাতেমা নাসরিনের বড় বোন মামলার বাদী আরজিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার বোন ফাতেমা নাসরিনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, যাতে আর কাউকে যৌতুকের জন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়।’

/এফএস/ এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঘটনার তদন্তে যাওয়ার পথে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলেন পুলিশ কর্মকর্তা
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু: ওসি-চিকিৎসকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সর্বশেষ খবর
চাহিদার চেয়ে পশু বেশি, কিনতে হবে বেশি দামে
রাজশাহীতে প্রস্তুত চার লাখ ৬৬ হাজার কোরবানির পশুচাহিদার চেয়ে পশু বেশি, কিনতে হবে বেশি দামে
টিভিতে আজকের খেলা (১০ মে,২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১০ মে,২০২৪)
মীরসরাইয়ে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৬
মীরসরাইয়ে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৬
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান