‘একজন ব্যক্তি’ প্রভাব খাটিয়ে বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের ভবন এবং প্রতিষ্ঠান দখল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ব্যবহার করে এই কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তারা। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আবুল খায়ের। এর নেপথ্যে একজন মন্ত্রীর ছেলের হাত আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খন্দকার আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ব্যবহার করে একটি কুচক্রী মহল বেআইনিভাবে বন্ধ করে তালা ঝুঁলিয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে আইন আদালতকে তোয়াক্কা করা হয়নি, শুধুমাত্র ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক তা করা হয়েছে। আমাদের এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও ভবনটি দখল করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।’
এই প্রতিষ্ঠানে অভিযান ও তালা দেওয়ার নেপথ্যে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের মনে হয় এখানে একজন মন্ত্রীর ছেলের হাত আছে। উনি আমাদের ম্যানেজারকে বলেছিলেন, তিনি প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট কিনে নিতে চান। তখন আমাদের ম্যানেজার তাকে বলেছিলেন— আপনার তো টাকা আছে আপনাকে এটা কিনে নিতে হবে কেন? তখন মন্ত্রীর ছেলে বলেছেন, যদি বাড়ি ছেড়ে না দেন, তাহলে আঙুলটা বাঁকা করতে হবে।’
এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অভিযোগ করে বলেন, ‘অভিযানের দিন আসা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ দেখাতে পারেনি। শুধু বলছে, আপনারা দ্রুত মালামাল সরিয়ে নেন। এর জন্য কোনও কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি। তারা আমাদের লাইসেন্স স্থগিত করতে পারে, কার্যক্রম বন্ধ করতে পারে, কিন্তু আমরা কবে মালামাল সরিয়ে নেবো তাতো বলতে পারে না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমরা জানতে পেরেছি, প্রতিষ্ঠানটি ৬ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। মন্ত্রীর ছেলের ঘনিষ্ঠ ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান তা ক্রয় করেছে। অথচ এই সম্পত্তির দাম ৪৫ কোটি টাকার বেশি হবে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আরেকটি কথা, নামমাত্র মূল্যে এই সম্পত্তি কিনে নিলেও তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার কোনও নোটিশ দেয়নি। বরং তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ব্যবহার করে এই প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
খন্দকার আবুল খায়ের জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে এখন প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। এছাড়া ৫০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত চেম্বার করে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের গত ১৮ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি পরিদর্শন দল সেখানে যান। এরপর ১৮ মে তারিখ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠানো হয়। একইসঙ্গে কোনও প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ও লাইসেন্স স্থগিত করার আদেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরে আপিল করলে তা অগ্রাহ্য করে ৭ জুন তাদের চিঠি দেয়। নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আপিল করলেও তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। পরে তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট লিমিটেড ও ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চলমান অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এটি বন্ধ করা হয়। তবে অভিযানের সময় মালিকপক্ষের অভিযোগ ছিল— স্বাস্থ্য অধিদফতরের একের পর এক অভিযানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই কার্যক্রম বন্ধ করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। এর মধ্যে আবারও অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবে কী কারণে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, এ বিষয়ে অভিযানে থাকা কোনও কর্মকর্তা সেদিন কথা বলেননি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির পরিচালক খন্দকার আশফাক অভিযোগ করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে ‘বন্ধ থাকা’ ক্লিনিকে পরিদর্শনের নামে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।