X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে জুয়ার আসর বসিয়ে যেভাবে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৫১আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৩৫

ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে চালানোর মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। চক্রটির অন্যতম মূলহোতাসহ চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগ হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব বলছে, মূলত ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লীগ বা টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের উঠতি বয়সের তরুণদের টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার প্রচারণা চালাতো চক্রটি। 

চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. নিশাত মুন্না (২০)। এছাড়াও তার সহযোগীরা হলো, মো. কামরুল ইসলাম শুভ (২৭), মো. সুমন (৩৫) ও মো. নাজমুল হোসেন বাবু (৩১)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, একটি সিপিইউ ও একটি মনিটর উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) কাওরানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা র‍্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।

তিনি জানান, চক্রটি বিগত দেড় বছর ধরে চক্রটি বিভিন্ন বিদেশি অনলাইন জুয়ার সাইটের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। চক্রের অন্যতম মূলহোতা গ্রেফতার নিশাত মুন্না। তার নেতৃত্বে চক্রের সাত থেকে আট জনের একটি চক্র বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, একাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন ও হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ছিল। 

তিনি আরও জানান, এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশি বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার বা মার্কেটিংয়ের কাজ করতো। কেউ আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটের একাউন্ট খুলে দিতো, আবার কেউ একাউন্ট করা ব্যক্তির কাছ হতে অর্থ সংগ্রহ করে তা হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাতো। তারা বিভিন্ন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে তার সঙ্গে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচারের কার্যক্রম চালাতো। সেই বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বা তাদের পাঠানো লিংকের মাধ্যমে একাউন্ট খুলতো। কোনও নতুন গ্রাহক তাদের মাধ্যমে বেটিং সাইটে একাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেতো। তারা বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার সাথে জড়িত ছিল। 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি কর্তৃক অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ইতোপূর্বে বন্ধ করা হলে তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে জুয়া চালু করে। তারা নামে-বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহকদের নিকট হতে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করতো এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাতো। তারা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলতো এবং লভ্যাংশের টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করতো। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে অর্ধ কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
 
যেভাবে অনলাইন জুয়ার সাইট চালাতো চক্রটি

গ্রেফতার নিশাত মুন্না ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত। সে ‘NISHAT MUNNA’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং ‘Nishat Munna (সাইলেন্ট কিলার)’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং ও বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করতো। দেড় বছর আগে সে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে অনলাইন জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়। তার অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে তাকে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সে অধিক অর্থ লাভের আশায় বিভিন্ন বেটিং সাইটের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়। সে তার ইউটিউব চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার তৈরিকৃত ভিডিওতে বিভিন্ন অনলাইন জুয়া সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। সে তার প্রতিটি ভিডিওতে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেতো। পরে সে নিজেও অনলাইনের জুয়ার কার্যক্রম শুরু করে। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তি তার সাথে যোগাযোগ করলে সে তাদের অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে একাউন্ট খুলে দেওয়ার বিষয়ে কামরুলের কাছে পাঠাতো।

চক্রের আরেক সদস্য গ্রেফতার কামরুল স্নাতক শেষ করে একটি মোবাইল কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করতো। দেড় বছর আগে নিশাতের সঙ্গে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে সে গ্রেফতার নিশাতের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় জড়িত হয়। সে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরিচিত লোকদের অনলাইন জুয়ার সাইটে একাউন্ট খুলতে উদ্বুদ্ধ করতো এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সাইটে একাউন্ট খুলে দিতো। সে প্রতিটি একাউন্ট খোলার জন্য ৩০০ টাকা কমিশন পায় বলে জানা যায়।

গ্রেফতার সুমন অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত ছিল। সে রাজধানীর মালিবাগে স্টেশনারি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতো। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসার সুবাদে গ্রেফতার কামরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে কামরুল তাকে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বেটিং সাইটের একাউন্ট খুলে দেয় এবং তার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জুয়ার সকল টাকা লেনদেন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। গ্রেফতার সুমন পরিচয় গোপন করে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য সে কৌশলে তার পাশের একজন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীর নামে নিবন্ধনকৃত সিম সংগ্রহ করে, যাতে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মার্চেন্ট একাউন্ট হিসেবে লেনদেন করা যায়। পরবর্তী সময়ে সে বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের সকল প্রকার লেনদেন ওই মোবাইল সিমটি দ্বারা নিবন্ধনকৃত মার্চেন্ট একাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতো। এছাড়াও সে নামে-বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতো। গ্রাহকদের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ সে নিশাত মুন্না ও কামরুলের সহায়তায় হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম পরিচালনাকারীর নিকট পাঠাতো। 

গ্রেফতার চক্রের আরেক সদস্য নাজমুল নোয়াখালীতে থাই গ্লাস এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতো। সে ১ বছর আগে কামরুলের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে নোয়াখালী অঞ্চলে বেটিং সাইটের জন্য গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করতো এবং বেটিং সাইটে টাকা রিচার্জ বা বেটিং সাইট হতে টাকা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও সে নামে-বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতো। সে কামরুল ও নিশাত মুন্নার সহায়তায় গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ছিল।

গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

/কেএইচ/ইউএস/
সম্পর্কিত
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
গুলশানে চোর সন্দেহে পেটানোর পর যুবকের মৃত্যু, একজন গ্রেফতার
যাত্রাবাড়ীতে চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেফতার ১৫
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ