আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদকসহ তিন জন রয়েছেন। আহতদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। এসময় সাংবাদিকদের কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়েছে।
এসব হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)।
আহতরা হলেন- বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল, নিজস্ব প্রতিবেদক জোবায়ের আহমেদ ও ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন, দৈনিক কালবেলার অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক রাফসান জানি, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জনি রায়হান, আবু সালেহ মুসা, রবিউল ইসলাম রুবেল ও তৌহিদুল ইসলাম তারেক, নিউ এইজের বিশেষ প্রতিনিধি আহমেদ ফয়েজ, দেশ রূপান্তর পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুর রহমান রাব্বি, সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদক মুহাম্মদ আলী মাজেদ, শেয়ার বিজের প্রতিবেদক হামিদুর রহমান, ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক সিরাজুম সালেকীন, ব্রেকিং নিউজের অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক কাজী ইহসান বিন দিদার ও আহসান হাবিব সবুজ এবং একুশে টিভির প্রতিবেদক তৌহিদুর রহমান ও ক্যামেরা পারসন আরিফুর রহমান।
এছাড়াও আহত হয়েছেন, দৈনিক ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়ার রিপোর্টার তানভীর আহাম্মেদ ও শেখ নাসির, দৈনিক ইনকিলাবের ফটোসাংবাদিক এফ এ মাসুম, গ্রীন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি রুদ্র সাইফুল্লাহ ও ক্যামেরাম্যান আরজু, ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ আনিস, নুরুজ্জামান শাহাদাৎ ও ক্যামেরাপারসন আরিফুল ইসলাম পনি, কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক শেখ হাসান ও ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান, দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের ভিডিও জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়, বাংলানিউজের জাফর আহমেদ এবং ফ্রিল্যান্সার মারুফ।
এই সংঘর্ষে ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদক সালেকিন তারিনকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়েছে।
এসময় মারধরের শিকার হয়েছেন দৈনিক কালবেলার অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক রাফসান জানি। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নাইটেঙ্গেল মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমি আর বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল ভাই কাছাকাছি ছিলাম। এর মধ্যে দেখলাম দুই জন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্যকে কাকরাইলের দিকে ধাওয়া দিয়ে বেধড়ক মারা হচ্ছে। ২০-২৫ জন বিএনপি কর্মী রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাচ্ছে। আমি শুধু রাস্তার এপার থেকে এসে মাঝখানের সড়ক বিভাজকের উপর দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিলাম।
হামলাকারীরা পরিচয় জানার পরও পিটিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমার গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো ছিল, ওইপাশ থেকে দুই তিন জন এসে ধাওয়া দিল। সাংবাদিক, সাংবাদিক বলে চিৎকার করে আমাকে ধাওয়া দিল এবং ইচ্ছেমতো মারধর করলো। লাঠি, রড ও বাঁশ এমন কিছু বাদ নাই, যা দিয়ে তারা মারেনি। মারতে মারতে আমাকে ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জের কার্যালয় পর্যন্ত নিয়ে গেলো। আমি চেষ্টা করছিলাম সরে যেতে কিন্তু পেছন থেকে ধাওয়া দিচ্ছিল। সামনে যেই পাচ্ছিলো, সেই মারছিল।’
রাফসান বলেন, ‘কোনোমতে ডিআইজি কার্যালয় পর্যন্ত আসার পর তারা আমার পিছু ছাড়ে। সেখানে যাওয়ার পর আমি গাজী টিভির সাংবাদিকদের সাহায্য নেই এবং অফিসে জানাই। এরপর আমাকে আমার সহকর্মীরা ঢাকা মেডিক্যাল নিয়ে আসে।’
চিকিৎসকরা জানান, রাফসান মাথায় কিছু জায়গায় আঘাত পেয়েছেন। তার পিঠেও কয়েক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে হামলায় আহত হন ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার তানভীরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিক মুজাহিদ জানান, জামায়াতের সমাবেশ শেষ করে আসার পথে হামলা চালায় বিএনপিকর্মীরা। তানভীরকে রাস্তায় ফেলে ইচ্ছামতো পেটায়। তার অবস্থা গুরুতর।
সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল, ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন ও নিজস্ব প্রতিবেদক জোবায়ের আহমেদ। কাকরাইল মোড়ে উড়ে আসা ইট বা ভারীর কিছু আঘাতে ডান পায়ে আঘাত পান সালমান তারেক। এরপর সড়কে পড়ে গেলে একজনের সহযোগিতায় নিরাপদ অবস্থানে যান তিনি। আর পল্টনে পুলিশের ধাওয়ায় ভিড়ের মধ্যে রাস্তায় পড়ে যান সাজ্জাদ হোসেন। এ সময় অন্য মানুষের পদদলিত হয়ে আহত হন তিনি। অন্যদিকে পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতা কর্মীদের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে পদদলিত হয়ে আহত হন জোবায়ের আহমেদ।