গণহত্যা বন্ধ করতে হলে এর স্বীকৃতি এবং গণহত্যাকারীদের বিচার অত্যন্ত জরুরি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এ বিষয়ে পোল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকাবে।
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণের জন্য পোল্যান্ডের ‘নেভার এগেইন অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতাদের সঙ্গে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র নেতাদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হলোকাস্টের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত গণহত্যার ভেতর সবচেয়ে নৃশংস ও পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তিন দশকেরও অধিককাল ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার এবং এই নৃশংস গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করছে, যাতে বিশ্বে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করা যায়। আমরা আশা করবো পোল্যান্ডের ‘নেভার এগেইন’-এর মতো সংগঠন এই আন্দোলনে আমাদের পাশে থাকবে।’
সংগঠনটির পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণহত্যায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মদদ দিয়েছিল। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তাদের মদদপুষ্ট জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে পুনরায় কার্যক্রম আরম্ভ হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। এখন আমরা চাই ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, কারণ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে।’
নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, একাত্তরের গণহত্যার আমি একজন ভুক্তভোগী। আমরা একাত্তরের গণহত্যার বিচার চাই ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। আশা করি আমরা আমাদের সংগ্রামে ‘নেভার এগেইন’কে পাশে পাবো।
পোল্যান্ডের নেভার এগেইনের সভাপতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রাফাল প্যানকোভস্কি বলেন, আমরা হলোকাস্টের পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্বব্যাপী জনমত সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। গণহত্যা বন্ধ করতে হলে এর স্বীকৃতি এবং গণহত্যাকারীদের বিচার অত্যন্ত জরুরি। আমরা গণহত্যার বিরুদ্ধে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক আন্দোলনের সহযোগী।
তিনি বলেন, গত বছর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেভার এগেইনের পক্ষ থেকে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিভিন্ন সময়ে নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে আমরা অংশ নিয়েছি। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। এ বিষয়ে পোল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকাবে।