বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। প্রতিবছর বইমেলা শুরু হয় কিছুটা অগোছালোভাবে। কিন্তু গত বছর সেই অগোছালো রূপ দেখা যায়নি, প্রথম থেকেই ছিল গোছালো। মেলার সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সব মহল। কিন্তু এ বছর আবারও সেই এলোমেলো রূপে শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের মেলা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে চারটায় অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন ঘোষণার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম দিনে এলোমেলো, অগোছালো আর অব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে মেলা।
টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় সেখানে নেই কোনও নিরাপত্তাবলয়। প্রতি বছর মেলায় ঢুকতেই থার্মাল স্ক্যানার, ম্যাগনেটিক স্ক্যানার আর মেটাল ডিটেকটর দিয়ে চেক করতো পুলিশ। যার ফলে ভিতরে কেউ গ্যাসলাইট, ম্যাচ কিংবা সিগারেট নিয়ে ঢুকতে পারতো না। এবার সেটি না থাকায় মেলার ভিতরে অনেককে ধূমপান করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ছাড়া অন্য কোনও গেইটে নেই কোনও স্ক্যানার। রমনা কালীমন্দিরের গেটে স্ক্যানার দেখা গেলেও সেটির ব্যবহার দেখা যায়নি। মূল ফটক দিয়ে অবাধে সবাই ঢুকছেন, বের হচ্ছেন।
গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই মেলা দেখে কারও মনে হতেই পারে এখনও চলছে মেলার প্রস্তুতিপর্ব। মেলার প্রায় অর্ধেক স্টল, প্যাভিলিয়ন খোলা হয়নি, অনেকেই কাজ শেষ করতে পারেননি। যারা খুলেছেন তাদের অধিকাংশই সময় কাটাচ্ছেন তাকে বই সাজাতে। হাতে গোনা কয়েকটি স্টল-প্যাভিলিয়ন ছাড়া কেউই পুরোপুরি শুরু করতে পারেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে বাংলা একাডেমির দুটি প্যাভিলয়ন। তালতলায় লিটলম্যাগ চত্বরে আসেনি কেউই।
এরকম পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্টল বরাদ্দ আরও আগে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রকাশক, পাঠক ও বিক্রয়কর্মীরা। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের নির্বাহী ব্যবস্থাপক এ কে এম কামরুল বলেন, স্টল বরাদ্দের পর যেই সময়টা দেওয়া হয় আসলে তা যথেষ্ট না। আরও কয়েকদিন আগে বরাদ্দ দেওয়া হলে সবাই গুছিয়ে উঠতে পারতো, মেলাটাও সুন্দর হতো। গতবছর আরও আগে, মানে ২০ তারিখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যারফলে আমরা শুরু থেকেই সুন্দর মেলা দেখতে পেয়েছি।
মেলা উপলক্ষে রাত দশটা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। যারফলে এবার উত্তরা, মিরপুর থেকে পাঠকরা সহজে আসতে পারবেন। মেট্রোরেল ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চালু থাকবে। আমি মনে করি যারা মেলায় কাজ করছে তাদের কথা চিন্তা করে রাত ১০টা পর্যন্ত সেটি চালু রাখলে সবাই উপকৃত হবে৷ সর্বোপরি আমরা এবারের মেলা নিয়ে বেশি আশাবাদী।
কথাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী সাজিদ আহমদ বলেন, আমি গত তিন বছর ধরে বইমেলায় কাজ করছি। প্রথম দিকে সব সময়ই যেন মেলা এলোমেলো থাকে। তবে গতবার সময় বেশি পাওয়ায় আমরা একটি সুন্দর মেলা দেখেছি। বাংলা একাডেমির উচিত প্রকাশকদের একটু আগে বরাদ্দ দেওয়া। ফলে প্রকাশকরা সময় বেশি পাবেন, মেলাও পূর্ণ প্রস্তুতিতে শুরু হবে।
মেলায় পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার থেকে ঘুরতে আসা সাকিব রায়হান বলেন, মেলার প্রথম দিন ঘুরতেই আসলাম। মেলা প্রথম দিকে অগোছালোই থাকে। তবে পুরোপুরি গোছালো মেলা শুরু করা সম্ভব। সেজন্যে আয়োজক কমিটিকে স্টল বরাদ্দ আরেকটু আগে দেওয়া উচিত। তবে সার্বিক বিষয়ে এবার অব্যবস্থাপনা একটু বেশিই মনে হলো এবার, বিশেষ করে নিরাপত্তার বিষয়টি।
এ বিষয়ে জানতে অমর একুশে বইমেলার আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. এ কে এম মুজাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গত ৩০ জানুয়ারি বইমেলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, সবকিছু গুছিয়ে উঠতে দুই তিনদিন সময় লাগবে।