X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বিআরটিএর দালাল চক্র ও ঘুষবাণিজ্যের বিরুদ্ধে মাঠে দুদক

জামাল উদ্দিন
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কতিপয় অসাদু কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুষবাণিজ্য ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে গত জানুয়ারি থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট এই অভিযান জোরদার করে।

একই সঙ্গে পুরোনো মডেলের সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ক্র্যাপ, প্রতিস্থাপন ও মেয়াদ বাড়ানোর নামে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ঘুষবাণিজ্যসহ ১১৩ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।

দুদকে আসা অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দিয়েছিল বিআরটিএ। তখন এসব অটোরিকশার মেয়াদকাল ধরা হয় ১৫ বছর। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে এসব অটোরিকশা ভাঙা (স্ক্র্যাপ) শুরু করে বিআরটিএ। একই সঙ্গে স্ক্র্যাপ করা সিএনজি অটোরিকশার মালিকদের নতুন করে রেজিস্ট্রেশনও দিতে থাকে বিআরটিএ।

সেই হিসাবে, পুরোনো মডেলের প্রায় ১২ হাজার ৫০০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্থলে নতুন অটোরিকশা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিস্থাপন করতে গিয়ে মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ঐক্য পরিষদ ও বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতি গাড়ি ভাঙা বাবদ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন বাবদ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ১৪ হাজার টাকা ফি জমা দেওয়ার পরও প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়। পরে মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ ও অটোরিকশা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার ভগ্নাংশ ১০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। স্ক্র্যাপ, ভগ্নাংশ বিক্রি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর নামে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, মালিক সমিতি ও তাদের দালাল চক্র অন্তত ১১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এসব বিষয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিআরটিএ, মালিক সমিতি ও অ্যাসোসিয়েশনের এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে যাতে দুদক ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য দালাল চক্রের একটি তালিকা ও তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্পূর্ণ প্রতিহিংসা থেকে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। কিছু মানুষ আছে শুধু পেতে চায়। চাহিদা পূরণ না হলেই তারা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, বাস্তবে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। গাড়ির মালিকরা কেটে (স্ক্রাফ) নিয়ে গেছেন। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। রাস্তায় গাড়ি চলছে। এক টার্ম মেয়াদ তিন বছর থাকে। দ্বিতীয় টার্মও শেষ হওয়ার পথে। কারও কারও শেষও হয়ে গেছে। এখন এসব বলা হচ্ছে।

অভিযোগকারী সম্পর্কে বরকত উল্লাহ ভুলু বলেন, তিনি বলার কে? কোনও মালিক যদি বলতেন যে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন একজন শ্রমিক যদি বলেন এখানে দুর্নীতি হয়েছে, মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে; এখানে শ্রমিকের কী?

এবার তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, সব সময় নেন। এবারও চাইছেন। কিন্তু চাহিদামতো দিতে পারিনি। তাই এসব করছেন। তার কাজই এটা। এর আগেও তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছিলেন। সেটা তদন্ত হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে দুদক থেকে সার্টিফিকেট দিয়েছে। এবারও যদি তদন্ত হয়, আশা করি সেই সার্টিফিকেট পাবো। দুর্নীতি করিনি মর্মে এর আগে দুটি সার্টিফিকেট পেয়েছি দুদক থেকে। এবার পেলে হ্যাট্রিক হবে ইনশা আল্লাহ। চাঁদাবাজি, ঘুষবাণিজ্য তার দরকার হতে পারে। তার তো কোনও গাড়ি নেই। ব্যক্তিগত কোনও আয় নেই। কোনও চাকরিও করেন না। করেন শ্রমিক সংগঠন। মালিকদের এসব দরকার পড়ে না।

বরকত উল্লাহ ভুলু বলেন, মালিকদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও বৈধ অধিকার তার নেই। তিনি যা করছেন, সেটা অনধিকার চর্চা। তিনি অধিকারের বাইরে গিয়ে এটা করছেন। তিনি যে ১১৩ কোটি টাকার হিসাব দিলেন, সেখানে তো আমার গাড়িও আছে। মালিকদের সংগঠনে যারা আছেন, তাদেরও তো প্রায় তিন হাজার গাড়ি আছে। এই তিন হাজার গাড়ির হিসাবও কি তিনি দিয়েছেন? আমরা কি নিজেরা নিজেদের ঘুষ দিলাম?

এসব বিষয়ে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, অপরাধী কখন নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে না। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে।

অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুসন্ধানের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সেবাগ্রহীতাদের জিম্মি করে দুর্নীতিবাজরা পার পাবে না। বিআরটিএর ভেতরে যারা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধানে যাদের নাম আসবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনোভাবেই সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও সেবাগ্রহীতা জিম্মি হতে পারবে না। দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
মেটাল কয়েনের ফাঁদে ফেলে যেভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি
সর্বশেষ খবর
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে