রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ‘তেজগাঁও সাতরাস্তা-রেলগেট’ সড়ক তথা মেয়র আনিসুল হক সড়ক। কিছু দিন আগেও এটি ছিল পুরোপুরি ট্রাক-ভ্যানের দখলে। যতদূর চোখ যেতো, দেখা যেতো সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ দাঁড়িয়ে আছে। যানজট, বিশৃঙ্খলা এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সড়ক দখল ছিল নিত্যসঙ্গী। তবে কিছু দিন ধরে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র, বহুল আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ছোঁয়া।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের প্রচেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেয়র আনিসুল হক সড়ক। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দখলে থাকা ওই সড়ক মুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন ওই রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তি কমবে।
ফার্মগেট-তেজগাঁও এলাকায় রয়েছে এক ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এই সড়ক হয়ে জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, সংবাদপত্র ভবন, ছাপাখানা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন।
প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে এই রাস্তায়। এখানে রয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস, বিজি প্রেস, বিসিকসহ প্রায় ১০টি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের পার্কিং ক্ষমতা ৭০০-এর কাছাকাছি।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ জানায়, মেয়র আনিসুল হক সড়কের দুই পাশে সিটি করপোরেশনের ৭ ফিট জায়গা নিয়ে করা হয়েছে রিকশার লেন। বলা হচ্ছে এই পথে চলবে অযান্ত্রিক যান। তবে বাস্তবতা ভিন্ন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলম বলেন, ‘রিকশার জন্য যে রাস্তা দেওয়া হয়েছে সেখানে প্রকৃতপক্ষে রিকশা তো চলবেই না, এতে রাস্তাটা অকার্যকর হয়ে গেছে।’
ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহত্তর স্বার্থে এটি অপসারণ করতে সিটি করপোরেশনকে অফিসিয়ালি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের ধারণক্ষমতা ৬৫০-৭০০ গাড়ির, অথচ প্রতিদিন এর প্রায় ৫ গুণ বেশি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান যাতায়াত করে। শুক্র-শনিবার অফিসিয়াল ট্রিপ না থাকায় সব গাড়ি বৃহস্পতিবার রাতে এসে শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এছাড়া ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের রুট পারমিট দেশজুড়ে হওয়ায় সারা দেশ থেকেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রাত ১০টার পর এখানে এসে জড়ো হয়।
কেপিআইভুক্ত এলাকা হওয়ায় দিনেও কিছু ট্রাক-কাভার্ডভ্যান এখানে অবস্থান করে। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে এবং প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সম্মানে ওয়ার্কিং ডে-তে সড়কটি ভোর ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত শতভাগ পরিষ্কার রাখা হবে।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার স্নেহাশীষ কুমার দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কটি দখলমুক্ত করতে কয়েক দিন ধরে আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্টদের কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগেও একাধিকবার দখলমুক্ত করা হয়েছিল, তবে ধরে রাখা যায়নি। এবার তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদের নির্দেশনায় ও বিভিন্ন মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি শতভাগ পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। আশা করছি এবার সফল হবো।’