ব্রিটেনের আগামী ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে সাবেক স্ত্রী লেবার পার্টির বর্তমান এমপি আপসানা বেগমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এহতেশামুল হক।
আপসানা-এহতেশামের বিয়ে পরবর্তী নানা ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ডিভোর্সের ৯ বছর পর প্রাক্তন স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্যের বিপরীতে লন্ডনের বাংলাদেশ অধ্যুষিত আসন পপলার ও লাইমহাউজ থেকে এহতেশামের প্রার্থিতার বিষয়টি কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে আপসানা বেগমের দাফতরিক ও ব্যক্তিগত ফোন ও মেইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তরে জানান, নির্বাচনি ব্যস্ততার কারলে এ মুহূর্তে কথা বলা সম্ভব নয়। নির্বাচনের পর তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
তবে আপসানার সমর্থকসহ কমিউনিটির অনেকে এহতেশামের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, বিজয়ী হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা না থাকলেও শুধু বিরোধিতার জন্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
চার দশকের বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে সম্পাদনা ও শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন ড. রেনু লুৎফা। তিনি বলেন, এহতেশাম আপসানার বিরুদ্ধে তার রুচিবোধ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তবে, তার প্রার্থিতা নিয়ে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর মনির উদ্দীন আহমেদের কন্যা আপসানা ও সাবেক কাউন্সিলর এহতেশামুল হকের বিয়ে হয়। দুজনের গ্রামের বাড়িই সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়। ২০১৫ সালে এ দম্পতির ডিভোর্স হয়। ২০২০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) একটি পোস্টে আপসানা নিজের সংসারে নির্যাতনের শিকার বলে অভিযোগ করেন। আদালতকে তিনি জানান, তিনি ঘরে নির্যাতন, জবরদস্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আপসানা পারিবারিক সহিংসতা নির্যাতন বিষয়ক ব্রিটিশ সংসদের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের তিনটি ঘটনায় ২০২০ সালে আপসানার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের ৩০ জুলাই আদালতে আপসানা কোনও অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হননি।
নিজের প্রার্থিতা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে এহতেশামুল হক বলেন, ‘আমি তো প্রায় ছয় বছর আগে ফের বিয়ে করে সংসারী হয়েছি। আপসানার সঙ্গে আমার কোনও ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। ডির্ভোসের পর আপসানার সঙ্গে তিন বছর দলীয় কাজও করেছি। ২০১৯ সালেও আপসানা আমাকে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন। সাবেক স্ত্রী হিসেবে তাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু, একজন সাবেক কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার ঘর যেখানে, সে সিটের এমপি আমার প্রাক্তন। এ কারণে সেখানকার রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে বা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবো না, এমন তো কোনও আইন নেই।’ আপসানা একটি দলের প্রার্থী হওয়ার কারণে তিনি চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবেন না, সেটি তিনি নিজেও জানেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩১ জন অংশ নিচ্ছেন; যাদের মধ্যে ৯ জনই নারী। এদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া ছয় নারী এমপি হওয়ার দৌড়ে লেবারের দলীয় প্রার্থী হিসেবে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।