X
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
১ চৈত্র ১৪৩১

উপকূলের শতভাগ নারী জেলে দাদন ব্যবসার হয়রানির শিকার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৯

দেশের মৎস্যজীবীদের মধ্যে একটি বড় অংশ নারী। মৎস্য সম্পদের একটি বড় অংশই আহরণ করেন তারা। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। এমনকি প্রায় শতভাগ নারীকে উপকূলের প্রচলিত দাদন ব্যবসার হয়রানির শিকার হতে হয়।

বুধবার (৩ জুলাই) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘জলবায়‌ু পরিবর্তনজনিত অঞ্চলের নারী মৎস্যজীবীদের নীতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। নারী মৎস্যজীবীদের নিয়ে গবেষণাটি করেছে বাদাবন সংঘ।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী (কুয়াকাটা), বাগেরহাট (মোংলা) ও কক্সবাজার সদরের প্রায় ১৫০ নারী ও ১৫০ পুরুষ মৎস্যজীবীর ওপর এই গবেষণা চালায় মৎস্যজীবীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এই সংগঠন। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে সরাসরি সভা করার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বাদাবন সংঘ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পূরুষতান্ত্রিক সমাজে মাছ ধরা সব সময় ‘পুরুষের কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। নারীদের জেলে হিসেবে স্বীকৃতি নেই বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের নারীদের জেলে কার্ড পাওয়ার সংখ্যা খুব নগণ্য। এর পাশাপাশি নারীরা পুরুষ জেলের তুলনায় আয়ের ক্ষেত্রে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। কিছু অঞ্চলে দেখা যায় নারীরা সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। তবে তাদের অধিকাংশ সময় যায় মাছ কাটা ও বাছাই করতে। সে ক্ষেত্রে কাটা ও বাছাইকরণকে কতটুকু মৎস্যজীবী পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়, তা নিয়ে নারীরা বিভ্রান্তিতে ভোগেন।

সেমিনারে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বাদাবন সংঘ জানায়, প্রায় শতভাগ নারী উপকূলে বিদ্যমান দাদন ব্যবসার হয়রানির শিকার। তারা দীর্ঘ সময় (৮ থেকে ১২) ঘণ্টা লোনা পানিতে থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের শিকার হন। এ ছাড়া মাথাব্যথা, লোনা পানিতে শরীর ছিলে যাওয়া, চামড়া কালো ও সাদা হয়ে ওঠা এবং জরায়ুতে সংক্রমণ হয়। লোনা পানির ফলে পায়ের নিচে ও শরীরে সাদা ছত্রাক দেখা দেয়। নারী জেলেদের এই সমস্যা নিরসন করার মাধ্যমে আমাদের দেশের মৎস্য খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশে সুলভ হবে।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, উপকূলে ৪ শতাংশ নারী জেলে কার্ডধারী, যেখানে ৯৬ শতাংশ পুরুষ জেলে কার্ডধারী। এ ছাড়া ৯৩ শতাংশ নারী জেলে স্বাস্থ্যগতভাবে অসুস্থ এবং কোনও ধরনের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা পান না; ৪০ শতাংশ নারী বিধবা বা একক আয়কর্তা হিসেবে আছেন; ২৫ শতাংশ নারী সামাজিক সুবিধা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, শতভাগ নারী দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নেন; ২ শতাংশ নারী বিগত এক বছরে যেকোনো ধরনের স্কিমের সুবিধা পেয়েছেন; ৯৮ শতাংশ নারী ও পুরুষ মৎস্যজীবী কোনও না কোনও এনজিওর সঙ্গে যুক্ত।

এ ছাড়া কার্ডধারী ও যারা কার্ড পাননি, বেশির ভাগই নারীই অসচেতন। ফলে কীভাবে জেলে কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়, তা জানেন না। ৯৩ শতাংশ নারী জেলে স্বাস্থ্যগতভাবে অসুস্থ থাকেন এবং যথাযথ চিকিৎসা-সুবিধা পান না। উপকূল অঞ্চলে পানির লবণাক্ততার কারণে নারীদের বঞ্চনা অধিক মাত্রায় লক্ষ করা যায়। নারী জেলেরা লবণাক্ত পানিতে অনেক সময় ব্যয় করেন, প্রায়ই তারা বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগেন। ৪০ শতাংশ বিধবা বা একক আয়কর্তা নারীদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় মৎস্য আহরণ করতে।

নারী জেলেদের প্রতি এসব বৈষম্যের প্রেক্ষিতে সেমিনারে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বাদাবন সংঘ। সেগুলো হলো: 'জেলে' শব্দকে জেন্ডার সমতায় আনার জন্য ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ মৎস্যজীবী শব্দে অন্তর্ভুক্ত করা; শ্রম আইন-২০০৬-এ মৎস্যজীবীদের জন্য আইন স্পষ্ট করা গেলে মৎস্যজীবীদের শ্রমিক হিসেবে যথাযথ সহযোগিতা করা; জেলে নিবন্ধন করার জন্য মাঠপর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া; নারী জেলেদের নিয়ে 'মহিলা/নারী' শব্দ ব্যবহার করে সমবায় সমিতি নিবন্ধন করার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন; কিছু অঞ্চলে নারীরা সমুদ্রে গিয়ে মাছ কাটেন ও বাছাই করেন, তাদের 'মৎস্যজীবী' হিসেবে গণ্য করা; নারী মৎস্যজীবীদের স্বাস্থ্যগত ও সুরক্ষা ঝুঁকি নিরসনে উপকূল অঞ্চলে মৎস্য অধিদফতরের চলমান প্রকল্পে অধিক গুরুত্ব দেওয়া; যেসব এলাকায় জেলে নিবন্ধন তালিকা হালনাগাদকরণ কার্যক্রম অব্যাহত নেই, তা চলমান করার উদ্যোগ নেওয়া।

এ সময় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মৎস্য অধিদফতরের পরিকল্পনা, ম্যান্ডেট, বাংলাদেশের জলসম্পদের অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক উৎস, মৎস্য খাতে সাম্প্রতিক অর্জন, অভ্যন্তরীণ মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মাছ চাষের কার্যক্রম, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং উপকূলীয় মৎস্য চাষের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক শাহানা হুদা রঞ্জনার সঞ্চালনায় এ সময় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিল্লুর রহমান, বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমান, ইলিশ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পেরউপপরিচালক মাসুদ আরা মমি, সমবায় অধিদফতরের উপনিবন্ধক সামিয়া সুলতানা, গবেষক আমিনুর রসুলসহ মানবাধিকার কর্মী এবং পর্যায়ের নারী জেলেদের প্রতিনিধিরা।

/এএজে/এনএআর/
সম্পর্কিত
গার্মেন্টস কারখানায় ভূত আতঙ্কে ১৫ নারী শ্রমিক অসুস্থ
শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাকির হোসেন অস্ত্রসহ গ্রেফতার
ময়মনসিংহের ভালুকায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, আহত ৩০
সর্বশেষ খবর
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা: হাইকোর্টের রায় রবিবার
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা: হাইকোর্টের রায় রবিবার
ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ৩ জনের
ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ৩ জনের
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানি শ্যাডো ফ্লিটের একটি জাহাজ বাংলাদেশে
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানি শ্যাডো ফ্লিটের একটি জাহাজ বাংলাদেশে
সিরাজগঞ্জে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সিরাজগঞ্জে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
পরিবারসহ কূটনীতিক হারুনের পাসপোর্ট বাতিল
পরিবারসহ কূটনীতিক হারুনের পাসপোর্ট বাতিল
কক্সবাজার যেতে পারেননি সেই প্রকৌশলী, ব্রিফ করলেন বেবিচক চেয়ারম্যান
কক্সবাজার যেতে পারেননি সেই প্রকৌশলী, ব্রিফ করলেন বেবিচক চেয়ারম্যান
গহীন সুন্দরবনে গাছের ডালে শুয়ে থাকা নারী উদ্ধার
গহীন সুন্দরবনে গাছের ডালে শুয়ে থাকা নারী উদ্ধার
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে চায়ের দোকানে বিতর্ক, বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ
শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে চায়ের দোকানে বিতর্ক, বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ
রাতের আঁধারে ৩৭ লাখ টাকাসহ এলজিইডির প্রকৌশলী আটক
রাতের আঁধারে ৩৭ লাখ টাকাসহ এলজিইডির প্রকৌশলী আটক