X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০

দেশের জনগণের জন্য প্রতি কেজি ইলিশের খুচরা বিক্রয় মূল্য সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রককে নোটিশটি পাঠানো হয়।

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে ও ই-মেইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়েছে, ইলিশ মূলত বঙ্গোপসাগরের মাছ। এই মাছ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বিস্তৃত। ভারত ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন নদীতেও ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা নদীতে আসে। এ সময় নদীর প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট ও সুস্বাদু হয়। মূলত পদ্মার ইলিশ স্বাদে-গন্ধে উৎকৃষ্ট।

যেহেতু ইলিশ সাগরের মাছ, তাই পুকুর বা অন্য কোনও স্থানে এই মাছ চাষ করতে হয় না। ইলিশে উৎপাদন খরচ নাই। এটি শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে রুই, কাতলাসহ যেসব মাছ চাষ করা হয়, তা বাজারে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকাতে খুচরা বিক্রি হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও মাছ রফতানিকারকরা সারা বছর পদ্মার ইলিশ মজুদ করে রাখে।

সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে পদ্মার সব ইলিশ ভারতে রফতানি করে। ক্ষেত্র বিশেষে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচারও হয়। পদ্মার ইলিশ ভারতে রফতানি ও পাচার হওয়ার কারণে দেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশ পায় না।

বাংলাদেশে ইলিশ সুরক্ষায় তিন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এর মধ্যে অক্টোবরে ২২ দিন। এ সময় মা মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর বাচ্চা ফুটলে তার সুরক্ষায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকে। মাছের বৃদ্ধির জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই আবার এক দফায় নিষেধাজ্ঞা থাকে সাগরে। অন্যদিকে ভারতে নিষেধাজ্ঞা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। ১৫ জুন তাদের মাছ ধরা শুরু হয়। বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সুবিধা পাচ্ছে ভারতের মৎস্যজীবীরা। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলা নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতে ব্যাপকভাবে ইলিশ ধরা হয়। এতে বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে।

সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা জরুরি। কিন্তু এ বিষয় নিয়ে এখনও ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ। নোটিশ প্রাপকদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাংলাদেশের জনগণ কম দামে পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, ইলিশের দাম জনগণের ক্রয়সীমার বাইরে বলে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাওরান বাজার এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে অভিযান চালানো হয়। সেই সময় অভিযান পরিচালনার স্থানে ইলিশের দাম কমে যায়। অথচ ইলিশ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে মনোপলি কর্মকাণ্ড করছে। কিন্তু নোটিশ প্রাপ্তরা প্রতি কেজি ইলিশের সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেশের জনগণকে সুলভে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেননি।

নোটিশে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আরও বলেন, বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ১৮০ টাকা দরে রফতানি শুরু হয়েছে। ভারতে যে দামে ইলিশ রফতানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদের। ইলিশ রফতানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগে তৈরি করা। এছাড়া দেশের রফতানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী ইলিশ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য কোনও পণ্য নয়। এই মাছ রফতানি করতে চাইলে যথাযথ শর্ত পূরণ করতে হবে। তাই ইলিশ রফতানির ক্ষেত্রে দেশীয় বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে রফতানি মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ছিল। দেশের জনগণ যেখানে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় কিনছে সেখানে ভারতে রফতানি মূল্য কীভাবে ১ হাজার ১৮০ টাকা হতে পারে? এর ফলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নোটিশ প্রাপকরা চরম দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতিসাধন করেছেন।

এই নোটিশে আগামী সাত দিনের মধ্যে ইলিশের পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করা, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ইলিশ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার বিষয়ে লিখিতভাবে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেকোনও দেশে ইলিশ রফতানির ক্ষেত্রে দেশের বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে যেন রফতানি না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। না হলে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

/বিআই/আরকে/
সম্পর্কিত
নারীর প্রতি ‘অশালীন মন্তব্য’: হেফাজত ইসলামকে লিগ্যাল নোটিশ
নতুন দলের নাম ইস্যুতে ইলিয়াস কাঞ্চনকে আইনি নোটিশ
ডা. জাহাঙ্গীর কবির-তাসনিম জারার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোটিশ
সর্বশেষ খবর
১৬১ টাকা লিটার দরে রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত
১৬১ টাকা লিটার দরে রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত
জুনেই আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ
জুনেই আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ
সিলেটে ৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত
সিলেটে ৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত
রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২ জনের যাবজ্জীবন, ৯ জনের ১০ বছর সাজা
রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২ জনের যাবজ্জীবন, ৯ জনের ১০ বছর সাজা
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি