‘পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল নিপীড়নমূলক বাহিনী হিসেবে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকে তারা এই বাহিনীকে নিপীড়ক বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে। শাসনব্যবস্থা সংস্কার না করে শুধু পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করলে তার পরিপূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে না। তাছাড়া, পুলিশ কোনও অপরাধ করলে পুলিশ নিজেই তদন্ত করবে এটা চাই না।’
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত 'গণঅভ্যূত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
আলোচনা সভায় আলোচকরা বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল নিপীড়নমূলক বাহিনী হিসেবে। ব্রিটিশ আইনের ধারাবাহিকতায় এই প্রতিষ্ঠানটির চরিত্র এখনও তেমনি রয়েছে। বিশেষত রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকেন তারাই এই বাহিনীকে নিপীড়ক বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে।
এসময় মানবাধিকার কর্মী অধ্যাপক সি আর আবরার বিগত সরকার কীভাবে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে বড় বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের প্রতি দায় থাকতে হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই সুযোগ আর আমাদের আসবে না। এটা হারালে আরও হয়তো ৫০ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শাসনব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে, শাসনব্যবস্থা সংস্কার না করে শুধু একটি বাহিনীকে সংস্কার করলে তার পরিপূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাবে না। সবশেষ রেজিমে যে পুলিশি ব্যবস্থা ছিল তা একটা ভয়ঙ্কর ব্যবস্থা ছিল, এখানে আইনের কোনও শাসন ছিল না।
পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি খান আবু সাঈদ বলেন, পুলিশ সংস্কার করতে পুলিশ, সরকারের শর্ট টার্ম, মিডলটার্ম, লংটার্ম সবধরণের পলিসি আছে। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা কি আসলেই চান পুলিশ জনগণের পক্ষের হোক? প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে বিদ্যমান আইন দিয়ে এবং এই পুলিশ দিয়েই ঠিকমতো কাজ করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, দেশকে সংস্কার করতে কোনও বিভাগকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। পুলিশ, সংবিধান, বিচার এগুলোকে সম্মিলিতভাবে দেখতে হবে।
আইনের ইতিহাস গবেষক রাশেদ রাহুল বলেন, মানুষ রাষ্ট্র বলতে গত ১৫ বছরে পুলিশকে বুঝেছে। থানা রাষ্ট্রীয় সেবা প্রদানের পরিবর্তে একটা নিপীড়নের কারখানায় পরিণত হয়েছিল। এর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি না করে পুলিশ সংস্কারের প্রশ্নটি তোলা যাবে না। পুলিশকে গুলির নির্দেশনা দিয়েছে কারা? প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া পুলিশ সংস্কার হবে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ নিজার বলেন, নতুন রাষ্ট্রে নাগরিক বা জনগণের অবস্থান কোথায় হবে তা নির্ধারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষকে গুম করে ফেলা, খুন করে ফেলা সম্ভব নয় যদি আপনার নাগরিক অধিকার থাকে।
সভায় সমাপনী বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পুলিশ তৈরির বর্তমান পদ্ধতি একটা সাধারণ মানুষকে খুনিতে পরিণত করে। যে ছেলেটা গ্রামের লাজুক, পড়ালেখায় একটু দুর্বল, মাথা নিচু করে একা একা থাকে সেই ছেলেটা ৬ মাসের ট্রেনিংয়ের পরে তার বাবা, ভাইকেও খুন করতে পারে। আমরা চাই, মানুষের বিপদে যারা সবার আগে এগিয়ে আসবে সেই লোকটা পুলিশ হবে। পুলিশ কোনও অপরাধ করলে পুলিশ নিজেই তদন্ত করবে এটা চাই না। এতে পুলিশের উপর আস্থাহীনতা তৈরি হয়।