দিনভর দুর্ভোগের পর কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তিতুমীর শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে আটকে থাকা রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনটি রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। আর রাত ১০টা ১০ মিনিটে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। সারা দিন অপেক্ষার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষণা আসার পরই স্বস্তি ফিরে আসে সাত ঘণ্টা দুর্ভোগে থাকা যাত্রীদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ করায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুপুর থেকে আন্তনগর ও কমিউটারসহ মোট ২২টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এখন একটার পর একটা ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। নির্দিষ্ট কোনও শিডিউল নয়, সিরিয়াল অনুযায়ী সব ট্রেন ছেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সব ট্রেন ছেড়ে যেতে দেড়ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
শিডিউলে থাকা অন্য ট্রেনগুলো হলো—
নোয়াখালীগামী উপকূল (৭১২), সিরাজগঞ্জগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৭৬), তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস (৭৪৫), চিলাহাটিগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস (৮০৫), দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস (৭৪৩), কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্ধুর গোধূলি (৭৪৯), খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস (৭৬৪), পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস (৭৫৭), কুড়িগ্রামগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (৭৯৭), চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২), লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস (৭৫১), সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস (৭৪০), মোহনগঞ্জগামী হাওর এক্সপ্রেস (৭৭৭), রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস (৭৫৯), চট্টগ্রামগামী তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪২) ও পঞ্চগড়নগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (৭৯৩)। এছাড়াও রয়েছে কমিউটার ট্রেন জামালপুর কমিউটার, তুরাগ কমিউটার, তিতাস কমিউটার।
কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী রিদুয়ান ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ছয় ঘণ্টা পর ট্রেন ছাড়ছে, এটাই স্বস্তির বিষয়। এতক্ষণ অনিশ্চয়তায় থাকায় কষ্ট হলো।’
এদিকে দুপুর থেকে যাত্রীরা ট্রেন ছাড়া না ছাড়ার অনিশ্চয়তার মাঝেই ভোগান্তি নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন। এর আগে রাত সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরজমিন দেখা যায় ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন যাত্রীরা। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে স্টেশনের ফ্লোরেই বসে পড়েন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি। অনেকে স্টেশন মাস্টারের রুমে ও তথ্যকেন্দ্রে ভিড় করেছেন ট্রেন ছাড়ার সময় জানতে। অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
কমলাপুর থেকে সিলেটের উদ্দেশে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল কালনী এক্সপ্রেস। কিন্তু অবরোধ না ওঠায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় ছিলেন ট্রেনটির যাত্রীরা। কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রী রায়হান বলেন, আমি মোহাম্মদপুর থেকে দুপুর ২টায় স্টেশনে এসেছি। কাল আমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে ভূমি অফিসে। কিন্তু এখন এখানে আটকে আছি। সবাই বলছে রাতে ট্রেন ছাড়বে। তাই অপেক্ষা করছি।
এদিকে বিকাল ৫টা থেকে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা অবরুদ্ধ করে রাখে স্টেশন মাস্টার শাহাদাত হোসেনকে। পরে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে তিনি মুক্ত হন। এর আগে রাত ৮টার দিকে তিনি যাত্রীদের বলেন, যত রাত হোক ট্রেন ছাড়বে। আর যাদের জরুরি তারা কাউন্টারে টিকিট জমা দিয়ে টাকা নিতে পারেন।