বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার কাজ গড়ালো দ্বিতীয় দিনে। বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপ ঘিরে অবস্থান করছে। তাদেরকে দলবদ্ধ হয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে উৎসব করতে দেখা গেছে। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়। এসময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্লা রক্ষা বাহিনী, পুলিশ বা দমকল বাহিনীর কাউকেই দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভাঙার কাজে ব্যবহার করা বুলডোজরটি সরিয়ে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অনেককে বাড়ি ভাঙার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের হাতে হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দেখা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ভাঙার কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আবার অন্যদিকে ভাঙা দেয়ালে বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ রঙ-তুলি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখে দিচ্ছেন ।
সীমানা প্রাচীরসহ তিনতলা বাড়ির সামনের অনেকটাই এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটিতে রাতে লাগানো আগুন সকালে আর জ্বলতে দেখা যায়নি। উপরের কয়েকটি কক্ষ থেকে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোট-বড় সব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
সকাল থেকে শেখ মুজিবের ভাঙা বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। এক দল মানুষকে বাড়িটি থেকে দরজা-জানালা, ইট, লোহা, পাইপ, বইসহ অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে যেমন পারছে বাড়ির ভেতর থেকে জিনিসপত্র খোঁজে খোঁজে নিয়ে যাচ্ছে।
সেখানে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধ জনতার একজন বলেন, আমরা আর আওয়ামী লীগকে এ দেশে দেখতে চাই না। তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। বঙ্গবন্ধু ছিল স্বৈরাচার, তার মেয়েও স্বৈরাচার। আমরা চাই না এ দেশে আর কোনও স্বৈরাচার আসুক।
নূরুল হুদা ডিউক নামে আরেকজন বলেন, তাদের কোনও প্রতীক আমরা রাখবো না। সারাদেশে থাকা সকল চিহ্ন গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক। তাহলে তারা দেশে আসার আর সাহস পাবে না। আজকে ইতিহাস রচিত হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কবর রচিত হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউনের একজন সংবাদকর্মী সেখানে গিয়ে দেখতে পান, বাড়িটির ভাঙা অংশ থেকে হেকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। কেউ কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে কনক্রিট ভেঙে সংগ্রহ করছে রড। বাড়ির ভেতরে পড়ে থাকা একটি পোড়া গাড়ি থেকে ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে কয়েজনকে। পরে যানবাহনে করে এসব মালামাল তাদেরকে সরাতে দেখা গেছে।
গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশমুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাতেই বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়।
এরআগে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন’ নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর পাওয়ার পরপরই বিকালে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল উত্তেজিত জনতা।