পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব চাংক্রান, সাংগ্রাই, সাংক্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংগ্রাইং, থাংগ্রেন, বিঝু উপলক্ষে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ছুটিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে ১২টি আদিবাসী ছাত্র সংগঠন।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান উপলক্ষে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএসসি ঢাকা মহানগরের নুমং প্রু মারমার সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, ঢাকাস্থ ম্রো শিক্ষার্থী পরিবারের পায়া ম্রো, বাংলাদেশ চাক স্টডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক উথান চাক, টিএসএফের কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের সদস্য স্নেহলাল তঞ্চঙ্গ্যা, বম ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে লাললিং বম, বাংলাদেশ খুমী স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সদস্য সাংখেঅং খুমী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪টি ভিন্ন ভাষাভাষি আদিবাসী জাতির বসবাস। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও রীতি যা বাঙ্গালি জাতি থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র। বাঙ্গালির যেমন নববর্ষ উৎসব রয়েছে, তেমনি চৈত্র সংক্রান্তি এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য স্মরণাতীতকাল থেকে পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন নামে প্রধান সামাজিক উৎসবটি উদযাপন করে আসছে। উৎসবটিকে ম্রোরা চাংক্রান, চাকরা সাংগ্রাইং, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাই, চাকমারা বিঝু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী রাখাইনরা থাংগ্রেন নামে এই উৎসবটি স্বকীয় ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদযাপন করে থাকেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫৩ বছরের পথচলায় এটি একটি বৃহৎ সামাজিক উৎসব হওয়া স্বত্ত্বেও উৎসবটি স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালনের জন্য সরকারিভাবে এবং দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির ব্যবস্থা করা হয় নি। ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা, সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী ও কলকারখানার শ্রমিকরা এ উৎসবাদি পরিবারের সাঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে পালন থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত হয়ে আসছে। যার ফলে শহরে বসবাসরত আদিবাসী শিশু ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করলেও কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোনও ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু ক্লাস-পরীক্ষার রুটিন দিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার চালু রেখেছে। এছাড়াও প্রধান সামাজিক উৎসব উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আদিবাসী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শিল্প কারখানার আদিবাসী শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনও ছুটি প্রদান করা হয় না। বঞ্চিতকরণের রাষ্ট্রীয় এই উদ্যোগ একটি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ, যা সংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে গঠনে একটি অন্তরায়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল আদিবাসীরা যাতে নিজেদের প্রধান সামাজিক উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চারদফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো—
১। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (১২-১৬) এপ্রিল পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন সরকারি ছুটি প্রদান করা।
২। উৎসবের সময় এসএসসি ও এইচএসসিসহ কোনও পাবলিক পরীক্ষা না রাখা।
৩। উৎসবের সময় দেশের সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিতসহ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আদিবাসী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি প্রদান করা।
৪। উৎসবের সময় দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত আদিবাসী শ্রমজীবীদের ছুটি প্রদান করা।