টাকা-পয়সা রাখার ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েন এক দম্পতি। তাদের দুজনেরই বয়স ২৫ বছরের কম। তাদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে যান রাজধানীর উত্তরখানের ভাড়া বাসায়। পরে সাইফুর রহমান ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। তার হলো– মো. নাজিম হোসেন (২১) ও স্ত্রী (২৩)। তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়। এর আগে নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বঁটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্তমাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়েছে।
মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, সুযোগ পেলেই নাজিম হোসেনকে বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করতেন সাইফুর রহমান। সবশেষ রবিবার (৯ মার্চ) রাতে ওই তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করেন তিনি। এ সময় তার স্বামী প্রতিবাদ করেন। তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সোমবার (১০ মার্চ) রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে সাইফুর রহমান উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন। ওই রাতে এক বেডে ছিলেন সাইফুর রহমান, নাজিম ও তার স্ত্রী। নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে নাজিমের ঘুম ভেঙে গেলে রান্নাঘর থেকে বঁটি এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। পরে পালিয়ে যায় ওই দম্পতি।
এ ঘটনায় সাইফুর রহমানের ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈতৃক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিন-চার মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থল তার সামনেই ওই জায়গাটি।
গ্রেফতার দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে উত্তরার ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দুই-তিন দিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমানের সঙ্গে নাজিম ও তার স্ত্রীর পরিচয় হয়। পরে তাদের ফ্ল্যাটে আনেন। একপর্যায়ে ওই নারীকে ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনও বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে ধরনের কোনও তথ্য আমরা পায়নি।’
ধর্ষণচেষ্টার কারণে ওই দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করেছে, মামলাটি কোন পর্যায়ে যাবে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটি হত্যা মামলা। আদালতে মামলাটি যখন ট্রায়াল হবে তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে পরবর্তী সময়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন...