২০১১ সালে রাজধানীর মিরপুরের একটি গির্জায় শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেনের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে খালাসের রায় দেন। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন– রিপন দাস, শিমন শিকদার ও প্রভুদান বাড়ৈ।
আসামিদের মধ্যে প্রভুদান বাড়ৈ পলাতক রয়েছেন। অপর দুই আসামিকে রায় ঘোষণার সময় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি ফজলুর রহমান এসব তথ্য জানান।
এদিকে মামলার বিচার চলাকালে সুব্রত বৈদ্যর প্রেমিকা নীপা দাস, তার বাবা নিবারণ দাস, মা লিন্ডা দাস মারা গেছেন। তাদের আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সুব্রত হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় নিহতের বোন সুবর্ণা বৈদ্য প্রথমে দারুস সালাম থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয় না। পরে সুবর্ণা বৈদ্য ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত দারুস সালাম থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ তদন্ত শেষে ছয় জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায় দেন বিচারিক আদালত।
জানা গেছে, ২০১১ সালে সুব্রত বৈদ্য মিরপুর বাংলা কলেজের স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। চার বোনের একমাত্র ভাই সুব্রত। আর্থিক অনটনের কারণে মা-বাবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পারায় সুব্রত মিরপুর মাজার রোডের দ্বিতীয় কলোনির মেথদ লিস্ট সার্চে সানডে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ওই চার্চের নিচতলায় নীপা দাসের বাসা ছিল। নিপা দাসের সঙ্গে সুব্রতর প্রেমের সম্পর্ক হয়। এ নিয়ে নীপা দাসের ভাই ও বাবা-মায়ের সঙ্গে সুব্রতর সম্পর্ক খারাপ হয়। তারা নীপা দাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে সুব্রতকে চাপ দেন। সম্পর্ক ছিন্ন না করলে জীবননাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চার্চে ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় বিষয়ে পড়ানোর পর চতুর্থ তলায় সুব্রতকে ডেকে নেন নীপা। ওইদিন দুপুর আড়াইটায় নীপা টেলিফোনে স্বজনদের জানান সুব্রত অসুস্থ। সুব্রতর মা, ভাই, বোন গির্জায় গিয়ে দেখেন তাকে নিয়ে নীপা, তার মা-বাবা ও ভাইয়েরা নিচে নামছেন। সুব্রতকে মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে গেলে কর্তব্যরক্ত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নীপার পরিবার জানায়, সুব্রত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, সুব্রতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।