পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কিছুটা যাত্রী সমাগম শুরু হলেও আগের মতো সেই জৌলুস নেই রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটে। চিরচেনা সেই রূপ না থাকলেও প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও রয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে কিছুটা স্বস্তি আর পরিবারকে বাড়তি সময় দিতে অনেকেই আগেভাগে শেকড়ের টানে নদীপথে যাত্রা শুরু করছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পন্টুনে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। হাকডাক করে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। চাঁদপুরগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রীর কিছুটা চাপ থাকলেও বরিশাল-ঝালকাঠি-ভোলা-বরগুনা রুটের লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা।
লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে সুনসান নীরবতা। যাত্রীদের টিকিট কেনার হিড়িক নেই। অথচ বছর দুয়েক আগেও রমজানের শুরু থেকেই সরগরম থাকতো এসব কাউন্টার। স্টাফদের দম ফেলার ফুরসত যেখানে থাকতো না, সেখানে এখন যাত্রী সংকট।
সুন্দরবন লঞ্চের স্টাফ আবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত এক যুগ ধরে আমি লঞ্চে স্টাফ হিসেবে আছি। আগে এমন সময় এক মুহূর্তে লঞ্চ ভর্তি হয়ে যেতো আর এখন যাত্রী খরা, খালি লঞ্চ ছাড়তে হয়।’
টিকিট বিক্রির বিষয়ে আবির আরও বলেন, ‘এখন অগ্রিম টিকিট তেমন বিক্রি হয় না। যাওয়ার উদ্দেশ্যে এলেই সহজে টিকিট পাওয়া যায়। কেবিন, সোফা কিংবা লঞ্চের ডেকের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে।’
ছেলেমেয়ে নিয়ে সদরঘাটে আসা ইয়াসমিন আক্তার নামের একজন যাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদ যত এগিয়ে আসবে, ভিড় আস্তে ধীরে বাড়বে। তখন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি যাওয়া একটু বেশি কষ্ট হয়ে যায়। তাই আগেভাগেই চলে যাচ্ছি।’
এদিকে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশা ২৭ রমজান থেকে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে। মুসাব্বির নামের সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার বলেন, ‘বরিশালের মানুষের যাতায়াতের প্রিয় বাহন লঞ্চ। এখনও সবাই ছুটি পায়নি। ছুটি পেলে লঞ্চের যাত্রী আরও বাড়বে।’
ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে চলছে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস
ঈদুল ফিতরে নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আজ বুধবার (২৬ মার্চ) থেকে সদরঘাট হতে বরিশালে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হচ্ছে যা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রীদের জন্য চালু থাকবে।
এদিকে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত বরিশালগামী যাত্রীরা। কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আদনান ফায়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রথযাত্রা সত্যি খুব আরামদায়ক। আগে হাজারও মানুষের ভিড়ে লঞ্চে বাড়ি যেতাম, এখন একটু স্বস্তিতে বাড়ি যাই। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে জরুরি প্রয়োজনে বাসে যাওয়া হয়, তবে এমনিতে লঞ্চই প্রথম পছন্দ।’
ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে সজাগ কর্তৃপক্ষ
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বন্দর কর্তৃপক্ষও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) স্পষ্ট নির্দেশনা, কোনও অনিয়মে ছাড় নয়। অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই কেড়ে নেওয়া হবে লঞ্চের লাইসেন্স। এছাড়া ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত ও নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর এবং ঘাট এলাকায় যানজট নিরসনেও নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি।
ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ মালিকরা নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটালেই তাদের লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এছাড়াও সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রুট পারমিট বাতিল করে দেবো।’