শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে। ফলে শেষ মুহূর্তে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে রেল স্টেশন, বাস টার্মিনালের পাশাপাশি ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ টার্মিনালে ভিড় করছেন দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীরা। ঈদযাত্রার শুরুতে খুব বেশি যাত্রীর চাপ ছিল না সদরঘাটে। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে ঘরমুখী মানুষের পদচারণায় চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঢাকার অন্যতম এই প্রবেশপথ।
শনিবার (২৯ মার্চ) বিকাল থেকে ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ রয়েছে চোখে পড়ার মতো। তবে গত শুক্রবারের তুলনায় এদিন যাত্রী কিছুটা কম। তবে লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভরে পন্টুন ছেড়ে যাচ্ছে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে এদিন গাড়ির চাপ থাকলেও তেমন যানজট তৈরি হয়নি। যাত্রীরা কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই টার্মিনালে পৌঁছেছেন। বরিশালগামী যাত্রীদের একটি অংশ আগেভাগেই কেবিন বুক করে রেখেছেন। বাকিরা এসে ডেকের টিকিট সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা থাকায়, লঞ্চের টিকিট পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি কাউকে। অন্যান্য রুটের যাত্রীরা ভোগান্তিহীন, স্বস্তির ঈদযাত্রার কথা জানিয়েছেন। আর লঞ্চ সংশ্লিষ্টরাও জানিয়েছেন, যাত্রী উপস্থিতিতে সন্তুষ্ট তারা।
বরিশালগামী যাত্রী আসলাম মণ্ডল বলেন, ‘মিরপুর থেকে এসেছি। রাস্তায় জ্যাম হতে পারে ভেবে দুপুরের পর বের হই। তবে রাস্তায় কোনও অসুবিধা হয়নি। আগে কেবিন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। এখন ঘাটে এসে বিশেষ লঞ্চের কেবিন পেয়েছি। তাই ভালো লাগছে। আগে যেমন কষ্ট হতো ঘাটে আসতে গুলিস্তান থেকে দুই-তিন ঘণ্টা লাগতো, হেঁটে আসতে হতো, ঘাটে এসে টিকিট পাওয়া যেতো না। এমন কোনও কষ্ট নেই, স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছি।'
পটুয়াখালীর যাত্রী আবু সাঈদ বলেন, 'ঘাটে আসতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ডেকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাই ডেকের টিকিট নিয়েছি। এখন পথে কোনও সমস্যা না হলে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবো।'
বরিশাল রুটের পারাবত-২ লঞ্চের সুপারভাইজার সুমন বলেন, ‘শুক্রবারের তুলনায় ভিড় কম আজ। তারপরও অনেক মানুষ। কোনও লঞ্চ ফাঁকা যাচ্ছে না। আমাদের লঞ্চের কেবিন, ডেক সবভর্তি প্রায়।’
একই রুটের সুন্দরবন-১০ লঞ্চের স্টাফ নাফিস বলেন, ‘যাত্রী ভালো আছে। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে যেমন যাত্রী হতো এখন তেমন হবে না স্বাভাবিক। কেবিনের টিকিট কম-বেশি বিক্রি হয়ে যায়। ডেকে তিনভাগের দুইভাগ যাত্রী হলেই আমরা খুশি। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভালো যাত্রী হচ্ছে।'
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। সময় মতো লঞ্চ ছাড়ছে। নিয়মের ব্যত্যয় হলে ফাইন করা হচ্ছে। যাত্রী সেবায় বিশেষ লঞ্চও চলছে। যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছে।’
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। মানুষ যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে এজন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থা কাজ করছে। সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছে। কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, রাজধানীর সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকে। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সদরঘাট থেকে ৫০টি রুটে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে ১৭৫টি লঞ্চ। ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।