জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলক মামলা হচ্ছে দাবি করে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। মামলা গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট মামলা তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহারে দাবি জানায় সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এইচআরএফবি’র পাঠানো ২৩ বিশিষ্টজন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং পাশাপাশি যারা এভাবে আইনের অপব্যবহার করছেন তাদের ব্যাপারে জরুরি তদন্ত এবং ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।
সম্প্রতি অভিনেতা এবং এশিয়াটিক গ্রুপের একজন পরিচালক ইরেশ জাকেরসহ পেশাদার সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে ৪০৮ জনকে আসামি করে ঢাকার মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন জনৈক মোস্তাফিজুর রহমান, যার ছোটভাই মাহফুজ আলম শ্রাবণ (২১)। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের চূড়ান্ত মুহূর্তে ঢাকার মিরপুর এলাকায় গুলি বর্ষণে নিহত হয়েছেন। নিহত তরুণ বিএনপি কর্মী বলে বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। বাদীর ভাই মাহফুজ আলম শ্রাবণ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গ করা তরুণদের একজন। নিহত তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মামলা দায়ের হওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কিংবা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণহারে আসামি করায় মামলার তদন্ত ও বিচার বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিতেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে ধারণা করা যায়। এ পরিস্থিতিতে এটি স্পষ্ট যে, হয়রানি করার জন্য এ ধরণের মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। কাজেই, এ ধরণের মামলা গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার এবং ইরেশ জাকেরসহ অন্যান্য পেশাজীবী অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলাগুলো তদন্ত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। এছাড়া সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডে কারা কীভাবে কাদের নির্দেশে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল তা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উদঘাটন করা প্রয়োজন। কেননা, কোনও প্রমাণ ছাড়াই কারও বিরুদ্ধে হত্যা মামলার মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা দায়েরের ঘটনা নিশ্চিতভাবেই নিপীড়নমূলক বলে বিবেচিত হয় এবং একইসাথে তা অগ্রহণযোগ্যও বটে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক অভিযোগ ঢালাওভাবে আমলে নেওয়ার ফলে যেভাবে মামলা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য ও জামিন বাণিজ্যের বিকাশ ঘটছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার বিঘ্নিত হবার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সার্বিকভাবে ন্যায়বিচার বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারের সুযোগও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
এইচআরএফবি মনে করে, নিহত তরুণ শ্রাবণের হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি এবং একই সাথে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা যেন দায়মুক্তি না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। পাশাপাশি, উদ্দেশ্যমূলক সৃজিত মামলায় কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায় এইচআরএফবি। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে ইরেশ জাকের এবং অন্যান্য যাদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে যোগ করা হয়েছে, তাদের নাম অতি শিগগিরই যেন বাদ দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়, আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- এইচআরএফবির ড. হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহীন আনাম, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, সারা হোসেন, স্টেপসের রঞ্জন কর্মকার, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং, টিআইবি'র ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এএলআরডি'র শামসুল হুদা, নিজরা করি'র খুশী কবির, এএসএফ'র সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, বিডিইআরএম'র শিপন কুমার রবিদাস, বিলস-এর সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, ফেয়ারের দেওয়ান জামান, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, কর্মজীবনী নারীর রোকেয়া রফিক বেবী, নারীপক্ষের গীতা দাস, ন্যাডপোর আবদুস সাত্তার দুলাল, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।