বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবি পূরণ না হওয়ায় রাতেও বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। রবিবার (১৮ মে) রাত সাড়ে ১১টায় শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিকাল ৫টায় তারা সরকারকে পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। সে সময়সীমা রাত ১০টায় শেষ হলেও কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি, তাই তারা রাতেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে, একই দিন বিকাল ৩টায় গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আটটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। সেখানে শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ও মালিকপক্ষকে আমরা পাঁচ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। দাবি না মানলে প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেবো।’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবে না।’
সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার শ্রমিকের একটি বিক্ষোভ মিছিল কাকরাইল ও পল্টন মোড় হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে ১০ মে শ্রম ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা জানান, ৭ মে তাদের সব বকেয়া পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ প্রতারণা করেছে। এই অভিযোগে তারা আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দেন।
এর ধারাবাহিকতায় ১১ মে গাজীপুরে এবং ১২ মে বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে আবারও সমাবেশ করেন তারা। কিন্তু এতে মালিকপক্ষ কিংবা সরকার কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তাই ১৮ মে (রবিবার) বিকালে আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন শ্রমিকরা।
তারা বলেন, গত দুই মাস ধরে গাজীপুর ও ঢাকায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রমজান মাসে টানা সাত দিন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। সে সময় তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ সব পাওনা আদায়ের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের উদ্যোগে গত ২৯ মার্চ, ঈদের ঠিক একদিন আগে, মালিকপক্ষ অনুমানিক ১৭ কোটি টাকার বিপরীতে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু মালিকপক্ষ সেই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেনি। ৩ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয় মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এই অর্থ পেতেও শ্রমিকদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।
২৯ মার্চের বৈঠকে শ্রম সচিব বলেছিলেন, মে দিবসের আগেই সব শ্রমিক যেন পাওনা বুঝে পান, তা নিশ্চিত করা হবে। শ্রম সচিবের বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেদিন শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
এর ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল শ্রম সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং সিদ্ধান্তগুলো মেনে নেন। ওই বৈঠকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধ ও মালিকপক্ষের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নিতে অতিরিক্ত শ্রম সচিবের নেতৃত্বে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির ২২ এপ্রিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ৭ মে’র মধ্যে সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। সরকারপক্ষ যথাযথ তদারকির আশ্বাসও দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও শ্রমিকরা তাদের পাওনা বুঝে পাননি। কমিটির পক্ষ থেকেও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। তাই শ্রমিকরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।