দীর্ঘদিনের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের দাবির মুখে মালিকপক্ষের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থানরত টিএনজেড লিমিটেড ও মাহমুদ গ্রুপের শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মালিকের গাজীপুরের কারখানা, মহাখালী ডিওএইচএসের বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে শ্রমিকদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর আড়াইটা দিকে জাতীয় শ্রম ভবন থেকে “মার্চ টু যমুনা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে শতাধিক পোশাক শ্রমিক প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পরে পুলিশের বাধার মুখে তারা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেন। পরে শ্রমিকদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টিএনজেড গ্রুপের ১ হাজার ৫৮ জন শ্রমিকের ১৪ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস মিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধের আশ্বাস পাওয়ায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করছি।’
এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়
১। টিএনজেড ও মাহমুদ গ্রুপের মালিকপক্ষের গাজীপুরে অবস্থিত ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং মহাখালীর বাড়ি বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করা হবে।
২। শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সব পক্ষের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোয় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
৩। টিএনজেড মালিক বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৪। কোম্পানির ডিরেক্টর (ফিনান্স) সরকারের হেফাজতে থাকবেন যতদিন না শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সম্পন্ন হয়।
৫। টিএনজেড ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরিচালকদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এরআগে বিকালে মন্ত্রণালয়ে শ্রম ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তিনি বলেন, ‘শুধু টিএনজেড নয়— ডার্ড গ্রুপ, জেনারেশন নেক্সট, রোয়ার ফ্যাশনসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পাওনা রয়েছে, সেগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপদেষ্টা আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সব কারখানার মালিকদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনে তাদের জমি, কারখানা ও বাড়ি বিক্রি করে পাওনা মেটানো হবে। এসময় মালিকদের দ্রুত পাওনা পরিশোধে আহ্বান জানানো হয়েছে।