চলতি বছরের মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৬১৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৪২ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে দেশে অন্তত ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬১৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৯৬ জন। পাশাপাশি রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন এবং নৌপথে সাতটি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৯ জনের। সড়ক, রেল ও নৌ– তিন পথ মিলিয়ে মে মাসে দেশে মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১২১০ জন।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে
গত মাসে ঢাকায় ১৩৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৪৮ জনের, আহত হয়েছেন ২৭১ জন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা বরিশাল বিভাগে। সেখানে ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু এবং ৪৪ জন আহত হয়েছেন।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। মে মাসে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যা সার্বিক সড়ক দুর্ঘটনার ৩৯ শতাংশ এবং নিহতের ৪২ শতাংশের কাছাকাছি।
নিহতদের মধ্যে চালকই সবচেয়ে বেশি। মোট নিহতের ১৪২ জন চালক। এছাড়া ৯৫ জন পথচারী, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু এবং ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ৪৯ শতাংশই ঘটেছে যানবাহনের চাপায়। ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনায়। এছাড়া এক শতাংশেরও কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রেন-যান সংঘর্ষ বা ওড়না চাকায় পেঁচিয়ে।
কী কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা?
সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। এর মধ্যে আছে– মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন, মার্কিং বা আলোর অভাব; সড়কের বাঁকগুলোর অচিহ্নিত অবস্থান; নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি ও চালকদের বেপরোয়া আচরণ; উল্টো পথে চলাচল, চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী বহন এবং অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী, অতিরিক্ত ডিউটি ও ফিটনেসবিহীন যান।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশ
দুর্ঘটনা কমাতে ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে সংস্থাটি। এগুলো হলো– মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ; মহাসড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা; দক্ষ চালক গড়ে তোলা ও ডিজিটাল ফিটনেস যাচাই; ধীর-দ্রুত যান চলাচলের জন্য পৃথক লেন; সড়কে চাঁদাবাজি রোধ, চালকদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও বেতন; ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের সুযোগ নিশ্চিত করা; ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে প্রযুক্তির ব্যবহার; আধুনিক বাস সার্ভিস গড়ে তোলা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়ানো; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও রোড সেফটি অডিট এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করা।