বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের উপপরিদর্শক মো. ফেরদৌস আলম।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আবুল হাসান ও নিজাম উদ্দিন জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ। দেশের জন্য অবদান রাখার ২০২১ সালে একুশে পদক পেয়েছিলেন। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী না। তার জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য বিগত সরকার প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। তাকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে—সেখানে তিনি সন্দিগ্ধ আসামি। এ মামলার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।
ঘটনা ২০২৩ সালের অক্টোবরের। মামলা হয়েছে পরের বছরের আগস্টে। তার বিরুদ্ধে ফরোয়ার্ডিং সংশ্লিষ্টতার যে কথা বলে আসছেন—এ কথাগুলো ট্রেডিশনাল। আমরা সব সময় এ কথাগুলো দেখে আসছি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পালিয়ে যাননি, নিজের বাসায় ছিলেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আমরা খুবই দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, তিনি একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে দেশের ফ্যাসিস্ট রেজিমকে সহযোগিতা করেছেন। সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইজিপি, প্রধান বিচারপতি, ডাক্তার হওয়ার পরও তাদের খায়েশ জেগেছে মন্ত্রী, এমপি হওয়ার। তাদের কেন রাজনীতিতে আসতে হবে? তার বিরুদ্ধে নিউজ করার পর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা সব আসামিকে ধরছি না। ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাই, তাদের আমরা গ্রেফতার করি। ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা বিভিন্নভাবে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। দেশে ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি কাজ করছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, ভারতের আবুল কালাম আজাদ দেশের প্রতি অবদান রাখার জন্য তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের যে বিষয়টা ছিল—তা পারিবারিক। সেখানে তার পক্ষে রায় এসেছে।
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় ডিজিএফআইয়ের একজন এসেছিলেন। তিনি আমার ছবিসহ সব নিয়ে ছিলেন। আমাকে একটা কোর্টের দায়িত্ব দিতেও চেয়েছিলেন কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। যদি যেতাম তাহলে আজ পিপি হতে পারতাম না। মানুষ আমাকে চাইবে, কিন্তু আমি কোথায় যাবো, কোথায় যাবো না—তা আমাকে নির্ধারণ করতে হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে শামসুল আলমকে আটক করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয়। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশে পুলিশের সহায়তায় মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।