X
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২

রাত হলেই ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণ

কবির হোসেন
০৯ জুলাই ২০২৫, ২২:০৭আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ২২:০৭

সম্প্রতি রাজধানীসহ সারা দেশে রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরিসহ সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। জনবহুল এলাকা, বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ এসে এসব ককটেল নিক্ষেপ করছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সামাজিক নিরাপত্তা বিনষ্টের পাশাপাশি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার একটি পাঁয়তারা হিসেবে দেখছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেন তারা। এদিকে, পুলিশ বলছে, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।

বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি কেন্দ্র করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায়ই দেখা যেতো। সরকার পরিবর্তনের পর কিছু দিন থেমে থাকলেও সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে।

গত ৬ জুলাই রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারের সামনে একই ঘটনা ঘটে। এর আগে, ৩০ জুন হাতিরপুলে রাজনৈতিক দল গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
 
এ ঘটনার কয়েক দিন আগে ২৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ককটেল-সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটে। এর দুদিন আগে ২৩ জুন রাত ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের সামনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দলটির নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। গত ২ জুলাই প্রায় একই জায়গায় দলটির ঢাকা মহানগরের পদযাত্রার গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

এছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার শুনানি শুরু হওয়ার আগে গত ১৬ জুন সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। একই মামলার আগের শুনানির দিনও একই জায়গায় ককটেল বিস্ফোরিত হয়।

এসব ঘটনা ছাড়াও গাজীপুর ও মাদারীপুর জেলায়ও জুন মাসে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনা জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবী তানভীর হাসান বলেন, এসব বিস্ফোরণ, সহিংসতার প্রধান ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। তাই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি তারা দেখতে চান না। এসব নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও মনোযোগী হওয়া আহ্বান জানান তিনি।

ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, দেশ অস্থির থাকলে সবার জন্যই সমস্যা। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করা লোকদের অসুবিধা হয় বেশি। রাস্তাঘাটে বের হতে ভয় লাগে। কখন কী হয়! আমরা চাই কোনও বিশৃঙ্খলা ছাড়া দেশ এগিয়ে যাক। বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে আমরা চলতে-ফিরতে আতঙ্কে থাকি।

এ প্রসঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর থেকেও নির্দেশনা রয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ডিবির পাশাপাশি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটও কাজ করছে। ঘটনার পর আমাদের সাইবার স্পেশাল টিম বিস্ফোরণস্থলগুলো পরিদর্শন করেছে। ওইসব এলাকার বেশির ভাগ সিসিটিভি বর্তমানে অকেজো থাকায় এসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সেভাবে পাওয়া যায়নি। ফলে ম্যানুয়াল সোর্সের ওপর নির্ভর করে আমাদের তদন্ত করতে হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা নজরদারি রাখছি, যেসব হটস্পট আছে সেগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছি, সিভিল বেশে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। ঘটনার সময় যারা সেখানে উপস্থিত ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর সিসিটিভি ফুটেজ যেগুলো পেয়েছি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

‘এসবের পেছনে কারা জড়িত, ইনক্লুসিভ ইভিডেন্স (অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত প্রমাণ) ছাড়া এখনই কিছুই বলা যাচ্ছে না। গোয়েন্দা প্রতিবেদন, চাক্ষুষ সাক্ষী ও ডিজিটাল ইভিডেন্স– এ তিনটার সমন্বয়ে যখন নিশ্চিত হতে পারবো তখনই আমরা বলতে পারবো—এর পেছনে কারা জড়িত’, যোগ করেন পুলিশের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো আমাদের নজরে আছে এবং এসব ঘটনার পেছনে যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছি। যেসব জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে সিসি ক্যামেরা দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। এর আগে এ বিষয়ে যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি এবং সেগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ও ভয়ভীতির পরিস্থিতি সৃষ্টির মূল কারণ হলো দেশ একটি অকার্যকর ব্যবস্থায় আছে, বিশৃঙ্খল পরিবেশ চলছে—এটা বোঝানো। জনমনে নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার একটা অপচেষ্টা হিসেবে এসব ঘটনাকে দেখা যায়। রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই মূলত এ ঘটনাগুলো ঘটছে।

তিনি বলেন, এ ঘটনাগুলোকে যদি কঠোরভাবে দমন করা না হয় তাহলে নির্বাচনের আগে এটি আরও বাড়তে পারে। একটি গোষ্ঠী এখনও নির্বাচন চায় না। আরেকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে বাইরে রেখে, নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিকভাবে যেভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে তারা তো এখন বসে থাকবে না। বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারাও কাজ চালিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাংলামোটরে ককটেল বিস্ফোরণ
ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ, একজন আহত
এবার শাহবাগে এনসিপির অনুষ্ঠানে ককটেল বিস্ফোরণ
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১০ জুলাই, ২০২৫)
রিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পিএসজি
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপরিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পিএসজি
শাপলা দলীয় প্রতীক না হলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না: সারজিস
শাপলা দলীয় প্রতীক না হলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না: সারজিস
কুমিল্লা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত
কুমিল্লা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
বেশির ভাগ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে ফিকশন পাওয়া যায়: গভর্নর
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
বগুড়ায় ঘরে ঢুকে শ্বশুর ও গৃহবধূকে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
কল রেকর্ড বিবিসি উদ্ধার করেনি, করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা: তাজুল
বিবিসির অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র উঠে এলো
বিবিসির অনুসন্ধানে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র উঠে এলো