X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দর্জিপাড়ায় এখনও ঈদের আমেজ আসেনি

আসাদ আবেদীন জয়
১৪ এপ্রিল ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ২২:২৫

কেউ ভালো আছেন, কেউ চেষ্টা করছেন ভালো থাকার; কারও অভিযোগ--দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি। কারও ভাষ্য, ‘এবার কাজ কম কিংবা গত বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসা ভালো না।’ রাজধানীর দর্জিবাড়ির লোকদের কাছ থেকে জানা গেলো এমনই কিছু কথা। 

ঈদুল ফিতর উৎসবকে সামনে রেখে টেইলার্সের দোকানগুলোতে ঈদতুল্য ভিড় নেই। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের পাড়া-মহল্লার টেইলার্সের দোকানসহ বিভিন্ন মার্কেটের মাঝারি মানের টেইলার্স ও রেমন্ড শপ, টপ টেনের মতো নামি-দামি ব্র‍্যান্ডের টেইলার্সের শো-রুমগুলো সরেজমিন এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য উঠে আসে।

‘ধীরে সুস্থে কাজ করে যাচ্ছেন মাস্টার বিপুল’

মিরপুর ২ নম্বর এলাকার একটি টেইলার্স দোকানের মাস্টার বিপুল কুমার সরকার জানান, এলাকার মধ্যে তার দোকান হওয়ায় আশেপাশের মানুষই বেশি আসে। একটি সুতির সালোয়ার কামিজ বানাতে তিনি মজুরি নেন ৩৫০ টাকা। এছাড়া লেইস বা অন্য আনুষাঙ্গিক কিছু যুক্ত করলে সেক্ষেত্রে ডিজাইন অনুযায়ী মজুরি নেন। নীরবেই অন্য সব সময়ের মতো ধীরে সুস্থে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মাস্টার বিপুল কুমার সরকারের ভাষ্য, ঈদের আগে দর্জিবাড়িতে যেই কাজের চাপ থাকে তা এখনও তার দোকানে নেই।

‘ঈদের আগে টেইলার্সের দোকানে যে ব্যস্ততা থাকে তা আমাদের অনেক কইমা আসছে। গেছে বছর যা ছিল তার দুই ভাগের একভাগে নাইমা আসছে।’ বলছিলেন মিরপুর ১ নম্বরের একটি মার্কেটের টেইলার্সের দোকানের ম্যানেজার মো. হাসান শেখ।

কেন গ্রাহক কমে গেছে-- এমন প্রশ্নের হাসান শেখের ব্যাখ্যা, ‘এখন মানুষ আপডেট হয়ে গেছে। রোজার পনের দিন আগে থেকেই জামা-কাপড় বানানো শুরু করে। তাই এই সময়ে আইসা ব্যস্ততা কইমা যায়। কিন্তু এই রোজার মাসে আবার খরচ বেশি, তাই আমাদের চলতে কষ্ট হইয়া যায়।’

দর্জিপাড়ায় এখনও ঈদের আমেজ আসেনি

‘আমরা এখনও অর্ডার নিচ্ছি’

টেইলারিং কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা মহামারির পরের ঈদগুলোতেও তাদের হাতে কাজ ছিল। কিন্তু এবার সে রকম কাজ নেই। কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের দাবি, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে।

মিরপুর ১ নম্বরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের বেস্ট টেইলার্সের মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমাদের হাতে কাজ একেবারেই কম। গত বছর কিংবা করোনার মধ্যে হাতে কাজ ছিল। এবারের মতো কখনও হয়নি। সাধারণত রোজার এই সময় আমরা অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেই আর ডেলিভারি দিতে পারব না বলে। কিন্তু এবার এখনও অর্ডার নিচ্ছি। ঈদের আগে যতদিন পর্যন্ত পারবো অর্ডার নিয়ে কাজ করে যাবো।’

‘আমাদের হাতে কাজ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক’ উল্লেখ করেন কাটিং মাস্টার মনির হাওলাদার। তার কথায়,‘মানুষ যা-ই কিনতে যায় তারই দাম বেশি। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আসতে আসতে যখন তারা পোশাকের দিকে যায় তখন বাজেট কাটছাট শুরু করে। জামাকাপড় কম বানালেও চলবে, কিন্তু না খেয়ে তো আর থাকা যায় না। যারা আগে ৩/৪ টা করে ড্রেস বানাতো এবার তারা একেবারে না পারতে একটা করে ড্রেস বানাচ্ছে।’’

‘আবার অনেক বিত্তবান ব্যক্তি তাদের মতো ড্রেস বানিয়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত আর সাধারণ মানুষ কম আসছে। প্রতিবার তাদের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখি এবার সেটা নাই। আবার বানানোর মজুরি। গত বছর একই মজুরি নিয়েছি তারা খুশি মনে দিয়েছে, কিন্তু এবার তারা পারছে না।’ বলেন মনির হাওলাদার। 

নিজের বর্তমান ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ মিনহাজুর রহমান লিখন।  তিনি বলেন, ‘ঈদ কাছাকাছি চলে আসলেও আমাদের কাজ তেমন বাড়েনি। কেন বাড়েনি তা তো বলতে পারছি না, ওপরওয়ালা বলতে পারবে। তবে সাধারণ সময় যা ছিল এখনও তাই আছে। কোনও পরিবর্তন নেই।’

মিরপুর ১ নম্বরের একটি মার্কেটের টেইলার্সের দোকানের ম্যানেজার মো. হাসান শেখের মন্তব্য, ‘সব জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে টেইলারিংয়ের ব্যবসার গ্রাহক কমছে।’ 

দর্জিপাড়ায় এখনও ঈদের আমেজ আসেনি

লেইস ফিতার দাম কেমন

দর্জি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি ব্যবসা হচ্ছে লেইস, জরি কিংবা টেইলারিং আইটেম বিক্রি। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও জানায় তাদেরও এই ঈদে মন্দা যাচ্ছে। মিরপুরের লেইসের দোকানের বিক্রেতা মো. সোহেল জানান, তার দোকানে লেইস, সুতা, বোতামসহ বিভিন্ন টেইলারিং আইটেম পাওয়া যায়। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে চারশো টাকা পর্যন্ত দামের জিনিস পাওয়া যায় তার এখানে। 

সোহেল বলেন, ‘লেইস বা অন্যান্য ডিজাইনের বিক্রি কমেছে। গত বছরও ভালো ছিল, এবার বিক্রি কম। মানুষ খরচ কমাতে এই ধরনের জিনিস কম কিনছে।’

রেমন্ড ও টপ টেনের মতো নামি-দামি ব্র‍্যান্ডের দর্জি দোকান ঘুরেও দেখা যায় একই চিত্র। এসব ব্র‍্যান্ডের শো-রুমের কর্মকর্তারা জানায়, এই ঈদে তাদের ব্যবসা আশানুরূপ হচ্ছে না।

মিরপুর ১ নম্বর শাখার টপ টেনের টেইলর ম্যানেজার কোরবান আলী স্বপন বলেন, ‘ঈদের আগ মুহূর্তে টেইলরিংয়ের ব্যস্ততা আমাদের মোটামুটি আছে, গত বছরের মতোই বলা যায়। তবে প্রতিবছরে কিন্তু আমাদের ইনক্রিজ হয়। এবার ইনক্রিজটা তুলনামূলক গত বছরের থেকে কম। কাস্টমার ফ্লো দেখতে পাচ্ছি না।’

তিনি আরও যোগ যোগ করেন, ‘অলওভার সব কিছুর দাম বেড়েছে। ফেব্রিক্সের দামও বেড়েছে। গত বছর আমরা যে ফেব্রিক্স ১০০০ টাকায় বিক্রি করেছি এ বছর কিন্তু সেটা পারছি না। আমরা দাম বাড়িয়েছি, কারণ আমরাও কম দামে কিনতে পারছি না। গত বছর মানুষ একটার জায়গায় দুইটা কিনেছে কিন্তু এ বছর একটাই কিনছে। শার্টের জন্য আমরা মজুরি নেই ৫০০ টাকা আর প্যান্টের জন্য ৬৫০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘ছেলেরা শার্ট-প্যান্ট আর পাঞ্জাবি-পায়জামা এগুলোই বানাচ্ছে বেশি। আমরা ২৪ রমজান পর্যন্ত অর্ডার নেবো, ঈদের আগেই সব ডেলিভারি নিশ্চিত করবো।’

দর্জিপাড়ায় এখনও ঈদের আমেজ আসেনি

‘বিনয়ের চাপ বেশি’

২০১১ সাল থেকে টেইলার্সের কাজের সঙ্গে যুক্ত বিনয় হালদার। মিরপুর ২ নম্বর এলাকায় তার টেইলারিংয়ের দোকান। আসন্ন ঈদে কাজের ব্যস্ততা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের পোশাকগুলো দিতে হচ্ছে তাই কাজের চাপ একটু বেশি। অন্যান্য সময় থেকে এখন কাজের চাপ অনেক বেশি। আমরা ২৬ রমজান পর্যন্ত নতুন কাজের অর্ডার নেবো, এরপর আর নিতে পারবো না।’

পুরুষদের পোশাকও বিনয় হালদার বানান। তিনি বলেন, ‘আমার নারী গ্রাহক বেশি। এখন নারীরা বিভিন্ন রকমের ডিজাইন নিয়ে আসেন। তারা অনলাইন থেকেও আমাদেরকে ডিজাইন দেখান। যে ডিজাইন দেখানো হয় আমরা সেটাই করে দিচ্ছি।’

দর্জিপাড়ায় এখনও ঈদের আমেজ আসেনি

দামদর নিয়ে বিনয় হালদার জানান, একটি সালোয়ার কামিজ সর্বনিম্ন ৪৫০ টাকায় তৈরি করেন তারা। এছাড়া লেইস বা অন্যান্য ডিজাইন কিংবা ইনারসহ জামাগুলো ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা চার্জ করেন।

তিনি বলেন, ‘ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে এটা আরও বেশিও হয়ে থাকে। এলাকার মধ্যে হলেও আমার এখানে অর্ডার ভালোই আসে। সাধারণ সময় আমি এক থেকে দেড় লাখ টাকার অর্ডার পাই। আর রমজানের সময় দ্বিগুণ অর্ডার থাকে। আমার এখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষই বেশি আসে। শুধু এলাকার গ্রাহকরাই না, এলাকার বাইরের ক্রেতারাও আসে অর্ডার নিয়ে।’

বিনয় জানান, তাদের দোকানে ড্রেস তৈরির পাশাপাশি বিক্রিও করা হয়। বিক্রির জন্য ড্রেসগুলোর বেশিরভাগই তারা ইসলামপুর ও চাঁদনী চক থেকে কিনে আনেন।

/এসটিএস/আরআইজে/
সম্পর্কিত
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
গুলিস্তানে দুই জনের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
এসি বিক্রি বেড়েছে তিনগুণ, অনেক ব্রাঞ্চে ‘স্টক আউট’
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ