X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

১০০ লিচু ১০০০ টাকা, তবু দুশ্চিন্তায় এই গ্রামের চাষিরা

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
২১ মে ২০২৪, ০৮:০১আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ১৩:৫৫

শত বছরের বেশি সময় ধরে লিচু চাষের ঐতিহ্য কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। গ্রামটি ‘লিচু গ্রাম’ নামে পরিচিত। প্রত্যেক মৌসুমে এখানে বাম্পার ফলন হয়। তবে এবার অতিরিক্ত গরম ও শিলাবৃষ্টিতে প্রচুর ফল নষ্ট হয়েছে। ফলে লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। 

চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি মাসজুড়ে বৈরী আবহাওয়া চলছে। রাতে ঠান্ডা, দিনে প্রচণ্ড গরম। দীর্ঘমেয়াদি খরার কারণে ঝরে যাচ্ছে লিচু। আবার কয়েকদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক ফল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন ভালো হয়নি। গত মৌসুমে আট থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমে তিন কোটি টাকার বিক্রি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। গাছের ফল দেখে বোঝা যাচ্ছে, ফলনে বিপর্যয় হতে পারে। ফলন ভালো না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন চাষি এবং বাগান মালিকরা।

প্রত্যেক মৌসুমে এই গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়

মঙ্গলবাড়িয়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামে অন্তত সাত-আট হাজার লিচু গাছ রয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে পাঁচ-ছয় হাজার। পাশের নারান্দি, কুমারপুর, হোসেন্দি ও শ্রীরামদি গ্রামে ছড়িয়ে আছে বাকি গাছ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠান, ঘরের সামনের অংশ, পুকুরপাড় ও ক্ষেতের আইলসহ সব জায়গায় লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে গ্রামে ঢুকতেই গাছে গাছে গোলাপি ও সবুজ রঙের লিচু চোখে পড়তো। এবার গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেলো, বেশিরভাগ গাছ ফাঁকা। অধিকাংশ মুকুল ও গুটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ফল ঝলসে গেছে, সেইসঙ্গে ফেটে ঝরে পড়ছে। গোলাপি রঙের লিচুগুলোর খোলসজুড়ে কালো দাগ। তবে স্বাদ ঠিক আছে।

এবার লোকসানে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের রাজিব মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিচু বিক্রি করে গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে এসেছে সচ্ছলতা। বাগানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। বাগান মালিকরা মৌসুমের শুরুতে বেশিরভাগ গাছ পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন। এতে লাভ-লোকসান যা-ই হোক, তা পাইকারদের হয়। আমি বাগান বিক্রি করিনি। নিজেই লিচু বিক্রি করি। প্রতি বছর ভালো লাভ হলেও এবার বেশিরভাগ ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। বাগান থেকে লিচুর শ’ এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। এরপরও ফলন ভালো না হওয়ায় লোকসান গুনতে হবে।’

দীর্ঘমেয়াদি খরার কারণে ঝরে যাচ্ছে লিচু, আবার ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে

প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা বিক্রি হলেও এবার টানা তাপপ্রবাহের কারণে গাছে ফল একেবারেই কম জানিয়ে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের চাষি আল আমিন বলেন, ‘এই মৌসুমে সবমিলিয়ে ৭০ হাজার টাকার মতো লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি। গরমের কারণে গাছেই ঝলসে যাচ্ছে ফল, সেইসঙ্গে ফেটে ঝরে পড়ছে। শুরু থেকে কৃষি অফিস বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছে। ফলে কিছু ফল টিকেছে, না হয় টিকতো না।’

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষয়ক্ষতির পরও অল্প পরিমাণ লিচু গাছে আছে। সেগুলো সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি, পাইকার ও বাগানের মালিকরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই কাজ। অনেকে গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন। লিচু থেকে পাতা সরিয়ে গুনে গুনে ৫০টি-১০০টি করে আটি বাঁধছেন কেউ কেউ।

মঙ্গলবাড়িয়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামে অন্তত সাত-আট হাজার লিচু গাছ রয়েছে

গ্রামটি লিচুর জন্য খুবই পরিচিত। অন্যান্য স্থানের তুলনায় এখানের লিচু বেশি রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বিভিন্ন জেলার লোকজন ও ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন প্রতিদিন। তবে ফলন কম হওয়ায় এবার দাম বেশি। বাগান থেকে ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

মৌলভীবাজার থেকে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে লিচু কিনতে এসেছেন মাসুদ মিয়া। তিনি মূলত পাইকারি ব্যবসায়ী। এখান থেকে নিয়ে মৌলভীবাজারে বিক্রি করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছর এখানের লিচুর বেশি চাহিদা থাকে আমাদের জেলায়। তাই কিনতে আসি। এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বড় আকারের ১০০ লিচু এক হাজার ২০০ এবং ছোট আকারের ১০০ লিচু এক হাজার টাকায় বাগান থেকে কিনতে হচ্ছে। পরিবহন ও সব খরচ দিয়ে অন্তত এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। এত দামে বাজারে বিক্রি করতে পারবো কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

গ্রামে ঢুকতেই গাছে গাছে গোলাপি ও সবুজ রঙের লিচু চোখে পড়ছে

দীর্ঘমেয়াদি খরা ও শিলাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর ফলন ভালো হয়নি বলে জানালেন পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছর মঙ্গলবাড়িয়া থেকে আট থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হতো। গতবার যা হয়েছিল, তার তিন ভাগের একভাগ হয়েছে এবার। বিক্রিও তাই কম হবে। চাষিদের বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়েছি। বাগান মনিটরিং করেছি। তারপরও ফলন কম হয়েছে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারের অন্যান্য লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর বাড়তি চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে স্থানীয় বাজারে এই ফল পাওয়া যায় না। ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান। এখানের লিচু আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি রঙে ও স্বাদে ব্যতিক্রমী। যে কারণে বাড়তি কদর রয়েছে। সেইসঙ্গে গ্রামের নামেই এই ফলের নামকরণ হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’। ঠিক কত বছর আগে এবং কীভাবে চাষের প্রচলন শুরু হয়েছিল, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে গ্রামের প্রবীণদের ধারণা, অন্তত ২০০ বছর আগে এখানে চাষ শুরু হয়। প্রথমে শখের বসে শুরু হলেও দুই দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হচ্ছে।

/এএম/ 
সম্পর্কিত
ফরিদপুরে ৮ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের সর্বনাশ
এবার লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
পিজিআর স্প্রে করার পর লিচুতে ছত্রাক! 
সর্বশেষ খবর
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস‘কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না’
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ধাক্কায় পথচারী নিহত, আহত স্বামী-স্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি
শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় নামলেন ওসি