মোহামেডানের ক্লাব আঙিনায় নিজের রুমের সামনে ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন সুলেমানে দিয়াবাতে। কিছুটা দূর থেকে আফ্রিকান ভাষার কথোপকথন দুর্ভেদ্য ঠেকছিল। ফোনে কথা শেষ হতেই ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের মাধ্যমে তার সঙ্গে কথা বলার আবেদন জানিয়ে রাখলাম। দিয়াবাতের মুডের নাকি ঠিক নেই। যখন-তখন মালির এই স্ট্রাইকারের সঙ্গে কথা বলা কঠিন। তারপরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন, একটু পরই ডাক এলো। অল্প সময়ের জন্য কথা বলতে রাজি। রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দলে খেলা প্রসঙ্গ নিয়ে শুরুতে কোনও কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। মগজে শুধু ফেডারেশন কাপের ফাইনাল গেঁথে আছে! তবে ফেড কাপ দিয়ে কথা শুরু করতে করতে আসল কথা একপর্যায়ে তুলেই ফেললাম। তখন এক ফাঁকে লাল-সবুজ দলে খেলা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ঠিকই দিয়ে গেছেন ৩৩ বছর বয়সী স্ট্রাইকার।
৫ বছর হলো মোহামেডানের জার্সিতে প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন দিয়াবাতে। এরই মধ্যে সাদা-কালোদের অন্যতম বড় তারকা হিসেবে সমর্থকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ১৫ গোল করে এবারের প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। গত বছর কুমিল্লাতে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মোহামেডানের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরপরই দিয়াবাতেকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলানোর বিষয় আলোচনায় চলে আসে।
দিয়াবাতেও ফাইনালের পর এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের কাছে সরাসরি নিজের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘যদি তারা (বাফুফে) চায়, আমার কোনও আপত্তি নেই। তারা চাইলে আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি। আমি সবসময় তৈরি।’
এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার ৫ বছর পূর্তির পর বাফুফেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টা যখন দিয়াবাতেকে জানালাম, তখন তিনি একটু অবাক হয়েই বললেন, ‘আসলে এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গত বছর শুধু আমি ও নকীব (মোহামেডানের ম্যানেজার) বাফুফেতে গিয়েছিলাম। ফেডারেশন কাপ শেষে সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাও এক বছর হয়ে গেলো। এরপর কী হয়েছে কিছু জানি না। আর এই খেলার বিষয়ে অনেক কথা বলেছি আগে। এখন শুধুই ফেডারেশন কাপের দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছি।’
এর আগেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা উঠাতে গিয়ে দিয়াবাতে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেনই বা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে লাল-সবুজ দলে খেলতে চাইছেন তারও আভাস মিলেছে। ৫ বছর ধরে এখানে থেকে বাংলাদেশের জল-হাওয়া কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও মালির আবহাওয়া প্রায় একই। সেখানেও অনেক গরম। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো। আমি এখানে বেশ উপভোগ করছি। এছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এটাও ভালো লাগার অন্যতম কারণ। এখানকার লোকজন আমাকে সম্মান করে। ভালোও বাসে।’
কথার ফাঁকে ফাঁকে আবারও সরাসরি প্রশ্ন- কেন বাংলাদেশ দলে খেলতে চাইছেন? কিছুটা বিরক্ত নিয়ে তার উত্তর, ‘তারা আমার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমি তো তাদের আগে বলিনি। তারা জিজ্ঞেস করেছিল খেলবো কিনা? পাশাপাশি চাইছে যেন আমি খেলি। তখন আমি বলেছি অবশ্যই আমি খেলতে চাই। এই হলো পুরো ব্যাপার।’
তবে দিয়াবাতেকে খেলাতে চাইলেই তো হবে না। নাগরিকত্বের পাশাপাশি ফিফার অনুমতি পেতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। এছাড়া রয়েছে মালির নাগরিকত্ব ছাড়ার বিষয়টিও। বাফুফে এরই মধ্যে সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।
দিয়াবাতেকে প্রক্রিয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মনে হচ্ছিল কিছুটা বিরক্ত তিনি। তারপরও উত্তর দিলেন এভাবে, ‘এগুলো আমার দেখার বিষয় নয়। আমার কোনও ভুল নেই। যদি তারা সব ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে আমি খেলবো। নাহলে নয়। যদি আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে না পারি, তাহলে মরে যাবো না। আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ার রয়েছে। যদি তারা সবকিছু ব্যবস্থা করতে পারে ভালো, তাহলে আমার কোনও সমস্যা নাই।’
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী অনেকেই অপেক্ষায় আছেন, আপনাকে লাল-সবুজ দলে খেলতে দেখতে চাইছেন? এই প্রশ্নে অবশ্য দিয়াবাতে আর সামনে এগোতে চাইলেন না, ‘আর কোনও প্রশ্ন নয়। আবার কথা বলবো ফেডারেশন কাপ ফাইনালের পর। এখন শুধু সব মনোযোগ ফাইনালের দিকে দিচ্ছি।’
এমনটা বলেই ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে ঢুকে পড়লেন দীর্ঘদেহী মোহামেডান স্ট্রাইকার। যাকে ঘিরে শুধু সাদা-কালো নয়, বাংলাদেশের সমর্থকদের বড় স্বপ্ন!