X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হলে জনআকাঙ্ক্ষার কবর হবে: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

জুবায়ের আহমেদ
০১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:১৯আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ২৩:২৪

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবির কর্মসূচিতে গত ২৯ জুলাই বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একইদিন দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের আপ্যায়ন গ্রহণ করেন তিনি। পরে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নয়াপল্টনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নামিয়ে দিয়ে আসেন। এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। সোমবার (৩১ জুলাই) নয়াপল্টনে নিজ কার্যালয়ে এসব বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: স্বাস্থ্য তো আগাগোড়া ভালো ছিল। সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে স্বাস্থ্য যেমন থাকার কথা ছিল, তেমন নেই। এটাকে ভালোও বলা যাবে না, মন্দও বলা যাবে না, কথা তো বলছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামীতে বিএনপির কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: বিএনপি জনগণের কথা বলে। জনগণ বিএনপির ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। এখানে মাপকাঠি নেই। রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি সব কিছুর বিবেচনায় কখনও ছোট্ট একটি জনসভা বড় একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। আবার কখনও বিশাল জনসভা কিছুই করতে পারে না। সুতরাং, একটা জিনিস বলবো— যারা জনসভায় আসে তাদের দেখি, আর যারা আসে না তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঘরে বসে ছটফট করে।

বাংলা ট্রিবিউন: গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারেনি। এটাকে কী বিএনপির ব্যর্থতা বলবেন? এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: সেদিন আওয়ামী লীগ নানা জায়গায় মিছিল করেছে। লাঠি মিছিল করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের চ্যালেঞ্জটা ছিল কর্মসূচি সফল করা। শুধু অবস্থান নয়। ছোট করি বড় করি— যেখানে মিছিল করতে পেরেছি করেছি। টিয়ার শেল ও লাঠির সামনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কিন্তু কেউ মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়নি। আমি নিজে পুলিশের সামনে ছিলাম। পুলিশ আমার সঙ্গে কী আচরণ করেছে, সেটা দেখার পর বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে— এটা বলার সুযোগ নেই। বিএনপির ব্যর্থতার ইতিহাস নেই। চলমান ‘যুদ্ধের’ সমাপ্তি ঘটেনি। সুতরাং, কে ব্যর্থ আর কে সফল, চূড়ান্ত পর্যায়ে তার ফলাফল জনগণ নির্ধারণ করবে। কারণ, কোনও কোনও যুদ্ধ বছরের পর বছর চলে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ৯ মাস চলেছে। এরশাদ সরকারের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ৯ বছর ধরে চলেছে। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ১৫ বছর লড়ছি। আর কত সময় লাগবে, আমি জানি না। হয়তো সময়ের ব্যবধান কমে আসছে ক্রমান্বয়ে। তারপর ইতিহাস লেখা হবে, বিএনপি ব্যর্থ নাকি সফল।

বাংলা ট্রিবিউন: ওই দিন অবস্থান কর্মসূচিতে যে বাধা ও সংঘাত হলো, তাতে বিএনপি কী পেলো?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: বিএনপি কিছু পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনে নেমেছে। বিএনপি বলেনি যে, ক্ষমতায় যেতে হবে। বিএনপি বলছে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে— কাকে তারা নির্বাচিত করবে। সুতরাং, জনগণ কী পেলো, সেটা জনগণের মনোভাব দেখে বোঝার চেষ্টা করুন। যেদিন বিজয় হবে জনগণের বিজয় হবে। সেই বিজয়ের পর জনগণের যদি মনে হয় বিএনপিকে পুরস্কৃত করবে, তাহলে যেদিন তারা সুযোগ পাবে, সেদিন করবে। হয় তিরস্কার অথবা পুরস্কৃত করবে। সুতরাং, বিএনপি কী পেলো না পেলো, চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল কী দাঁড়ায়, তখন বোঝা যাবে। আজকে যদি এই আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই দেশের জনগণ ব্যর্থ হবে। তাদের আকাঙ্ক্ষার কবর হবে। আমাদের দেশ নিয়ে কত দেশ কত কথা বলে। কোনও স্বাধীন দেশ নিয়ে তো এত কথা হবার কথা না। তাহলে এত কথা হয় কেন, নিশ্চয়ই আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে কোনও ত্রুটি আছে। নিশ্চয় আমরা স্বাধীন না। তাই কেউ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলে ফ্যাসিবাদ-লুটেরাদের কাছ থেকে স্বার্থ নেওয়ার জন্য। এ দেশকে শোষণ করার জন্য।

বাংলা ট্রিবিউন: ২৯ জুলাইয়ের ঘটনার পর ‘সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আপনাদের যে ধারাবাহিক কর্মসূচি’ তাতে কোনও ব্যাঘাত ঘটছে কিনা?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: ব্যাঘাত ঘটার কোনও প্রশ্নই আসে না। কর্মীরা তো পালিয়ে যায়নি। রাজনীতির কৌশল আছে। যুদ্ধের ময়দানে সামনে এগোনোর বীরত্বের কাহিনি যেমন আছে, সেই বীরত্ব অর্জন করার জন্য যুদ্ধকালীন সময়ে পিছু হটারও নিয়ম আছে। পিছু হটা মানে আত্মসমর্পণ না। পিছু হটার মানে হলো— আবারও শক্তি সঞ্চয় করে সামনে এগিয়ে শত্রুকে আঘাত করা। আর বিএনপি তো একটা রাজনৈতিক দল। এটা তো কোনও ট্রেডিং কোম্পানি না। এরা কেউ বেতনভুক্ত কর্মচারী না। প্রতিদিন প্রতিটি কর্মী আসছে। তাদেরও জীবন আছে। তাদের সংসার আছে। তাদের ওপর পারিবারিক দায়িত্ব আছে। তাদের রোজগার করতে হয়। উকিল-মোক্তারের টাকাও জোগাড় করতে হয়। জেলখানায় গেলে জেলের খরচ মেটাতে হয়। আবার মিছিলে আসতে হলে সেখানেও তাদের পয়সা লাগে। তাই বিএনপির মিটিংয়ে ভাড়া করা লোক আসে না। এখন সরকার যেটা করে, তারা ভাড়া করে আনার মতো লোক পায় না। বড় বড় প্যান্ডেল করে অনেক চেয়ার আনে। চেয়ার দেখা যায়, মানুষ দেখা যায় না। এই সরকার ভোট করে, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে মানুষ পাওয়া যায় না। সেই সরকারকে নিয়ে আমার সমালোচনা করতেও ঘৃণা লাগে।

বাংলা ট্রিবিউন: বিভিন্ন সভায় ও আলোচনায় আপনাকে বলতে শুনেছি, ‘সরকার কাগুজে বাঘ, টোকা দিলেই পড়ে যাবে’। ২৮ জুলাই আপনারা মহাসমাবেশ করলেন, তেমন কিছুই তো দেখা গেলো না। 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: টোকাটা কখন পড়বে, কখন দেবো সেটা তো আপনাকে বলবো না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোনারগাঁও থেকে খাবার আনা হয়েছে। আমার প্রশ্ন আপনার মাধ্যমে, আমাকে ওইখানে মারার নির্দেশটা কে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ছাড়তে বলেছেন, চিকিৎসা করাতে বলেছেন। সোনারগাঁও থেকে খাবার এনেছে। এর থেকে মেহমানদারি আর বড় কিছু হয় না। কিন্তু ওই পর্যন্ত যাওয়ার যে ব্যবস্থাটা করেছে ধোলাইখালে, সেই নির্দেশনাটা কে দিয়েছে? প্রধানমন্ত্রী তাদের শনাক্ত করুক। তারপর সামনে এই খাওয়ার গল্প, এই ছবি, যত পারে প্রতিদিন দেখাক। কোনও আপত্তি নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: এ ঘটনায় আপনি কি ডিজিটাল আইনে মামলা করবেন?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: আমি সাইবার আইনে বিশ্বাস করি না, মানি না। কিন্তু সাইবার আইনে এই মামলা হয়। এটা ক্রাইম। অনুমতি না নিয়ে যদি কোনও কিছু প্রচার করা হয়, সেটা অন্যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো। ওই দিন (২৯ জুলাই) দুই-তিনটা বাসে আগুন দিয়েছে। ড্রাইভারদের বক্তব্য জনগণের কাছে আসছে। যারা গাড়িতে ছিল তাদের বক্তব্য আসছে। পুলিশের সামনে দুইটা হোন্ডা আসলো, গাড়ি থামালো, লোক আসলো আগুন দিলো। তাহলে সেটা যৌথ বাহিনীর কাজ— আওয়ামী লীগ ও সরকারের।  আর এতদিন বিশ্বকে যে অন্ধকারে রাখা হয়েছে, আবারও পুরান কৌশলে নতুন করে তা শুরু করেছে। আমাদের হাতে লাঠি ছিল না। আমরা কি গাড়ি পোড়াতে নেমেছি নাকি? আমি অন্যের গাড়ি পোড়াবো কেন?  সব সময় সব মানুষকে ধোঁকা দেওয়া যায় না। কিছুদিন কিছু মানুষকে ধোঁকা দেওয়া যায়। সেই ধোঁকা দেওয়ার সময়টা পার হয়ে গেছে। এখন মানুষ বুঝতে শিখেছে। পশ্চিমা বিশ্ব অন্ধভাবে বিশ্বাস করতো হাসিনাকে। তারা এখন কেউ বিশ্বাস করতে পারে না। বিশ্বের সব বিবেকবান লোক চোখে দেখছে। প্রতিদিন তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। নতুন করে নাটক এখন আর হয় না। সব কৌশল সব সময় এক ফলাফল দেয় না।

বাংলা ট্রিবিউন: বিএনপির কর্মসূচি বারবার পিছিয়ে দেওয়াটা কী প্রমাণ করে?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: আমরা সরকারের চাকরি করি না যে, প্রতিদিন কর্মসূচি দেবো। একটা রাজনৈতিক দলের বুদ্ধি-বিবেচনা আছে। জনগণের বিষয় ভাবার আছে। সব কিছু ভেবেই আমাদের কর্মসূচি দিতে হয়। আমরা গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) জনসভা ডাকলাম, পরে জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে কর্মসূচি শুক্রবারে নিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে প্রতিদিন যে ভোগান্তি হয়, দুই-চারদিন হরতাল আর রাস্তায় মিটিং হলে সেই ভোগান্তি হয় না।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
সর্বশেষ খবর
ভারতকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খসড়া সূচি করেছে পাকিস্তান
ভারতকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খসড়া সূচি করেছে পাকিস্তান
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড