জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি উদ্দেশ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। জাতীয় নাগরিক কমিটি কী চায়, তাদের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের ভাবনা কী––এসব বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের৷
বাংলা ট্রিবিউন: মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেগুলো কী অবস্থায় আছে বলে মনে করেন?
নাসির পাটোয়ারী: ৫ আগস্ট যে ঘটনাটা ঘটেছিল এটা শুধু গত ১৪-১৫ বছরের জার্নি না। এটা ১৯৪৭ সাল বা তারও আগের একটা জার্নি। এই জনপদের মানুষের সবসময় একটি মুক্ত ও স্বাধীন বাংলা ভূমি চেয়েছিল। বিগ স্পেকট্রামে সেটা এখনও অধরা। এখানে রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল, কিন্তু মানবাধিকারের জায়গা থেকে ব্রিটিশ নিপীড়নমূলক আইনগুলোই রয়ে গিয়েছিল। সেই পরম্পরায় ও সেই মনস্তাত্ত্বিক জায়গা থেকে কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানটা বানানো হয়েছিল। যে সংবিধানটা গত ৫৩ বছরের মানবিক জায়গাগুলো কখনও রক্ষা করতে পারে নাই। অসংখ্য গুম-খুন হয়েছে। গত ৫ আগস্টে ১৫০০ ওপরে শহীদ, ৪০-৫০ হাজার আহতের যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ছিল সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা একটা জায়গায়।
দ্বিতীয় আরেকটি জায়গা হলো, এই আন্দোলনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল দ্রব্যমূল্য কমার, সেটি এখনও অধরা। এছাড়াও মানুষের যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, সেটি গণঅভ্যুত্থানের পরও অধরা বলে আমরা মনে করি। জীবনের বিনিময়ে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে মনে করেছিলাম– সে জায়গাগুলো অধরা।
বাংলা ট্রিবিউন: ঘটে চলা ‘মব জাস্টিস’, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের মতো ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা কীভাবে দেখছেন?
নাসির পাটোয়ারী: আমরা সিস্টেমেটিক আকারে যদি দেখি, তাহলে সেখানে আমাদের যে প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় যে বাহিনীগুলো, ইনস্টিটিউশনগুলো রয়েছে সেগুলোতে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। একজন শাসকের আন্ডারে সবকিছু পরিচালিত হবে। যখন তিনি চলে গিয়েছেন, সবগুলো সিস্টেম ভেঙে পড়েছে।
এখানে ইনস্টিটিউশন ছিল না, পুলিশকে একটি পেটুয়া বাহিনী করা হয়েছিল। তারা জনগণের ওপর যেভাবে গুলি চালিয়েছিল এবং তাদের প্রতি জনগণের কোনও বিশ্বাসের জায়গা ছিল না। এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো যায়নি। র্যাবকে মানুষ গুম-খুন-নির্যাতনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যান্য যে বাহিনীগুলো রয়েছে সেগুলোর প্রতিও জনগণের অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে মব জাস্টিসগুলো কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। কিন্তু মব জাস্টিসগুলো কেন ঘটেছিল, সেখানেও আমাদের প্রশ্ন আছে।
গত ৫৩ বছর ধরে মানুষের যে বাকস্বাধীনতা দমন করে রাখা হয়েছিল, মানুষের এই ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ফিরে এসেছিল গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মত প্রকাশ করছিল। যার ফলে একটা মব জাস্টিসের পরিবেশ দেখা দেয়। আমাদের গণঅভ্যুত্থানে কোনও রাজনৈতিক সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী ছিল না। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে কোনও গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবে একটা সঙ্ঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী বা রাজনৈতিক শক্তি নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের এই গণঅভ্যুত্থানে এর অভাব ছিল। ফলে মানুষ তাদের ফ্রিডম এক্সপ্রেশন প্রকাশের চেষ্টা করেছে এই মব জাস্টিসের মাধ্যমে।
এগুলো নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নাগরিক কমিটি কাজ করছে। সে জায়গা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারের সঙ্গে আলোচনা করছে। আমরা তাদের নির্ভয় দেওয়ার চেষ্টা করেছি, তাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রতিবিপ্লবের শঙ্কাবোধ করেন কিনা?
নাসির পাটোয়ারী: প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা তো থাকেই। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ১৫ বছর ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে মানুষ উৎখাত করেছিল। এই ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের যে পকেটগুলা রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে জনগণ ও রাষ্ট্রকে বিশৃঙ্খল করার চেষ্টা করছিল। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত সেখানে অংশগ্রহণ করে। তারা বাংলাদেশের ভেতরের ও বাইরের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করে। পরাজিত শক্তিকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার পর থেকে তারা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা জাগিয়ে যাচ্ছিল।
তবে জনমানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিল। তারা সেই জায়গাগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে রক্তের মাধ্যমে প্রতিবিপ্লবগুলো প্রতিরোধ করেছে।
বাংলা ট্রিবিউন: সংবিধান সংস্কারে কমিশন করা হয়েছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
নাসির পাটোয়ারী: প্রথমত এই বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আগের যে সংবিধান ছিল, সেটা জনগণের প্রত্যাশার মাধ্যমে বাতিল হয়ে গিয়েছে। সে জায়গা থেকে এখনও যে সংবিধানটা বিরাজমান, আমরা তা দেখতে চাই না। বিভিন্ন ভাষা বা ধারার যে মানুষগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছিল তার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে– নতুন একটি সংবিধান আমরা চাই। এই নতুন সংবিধানের জন্য একটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের কাজ যদি তারা শুধু কিছু জায়গায় সংস্কার করে চলে যায়, সেক্ষেত্রে আমরা মানবো না। আমরা মনে করি সংস্কার কমিশন বিভিন্ন কমিউনিটির যারা অংশীজন রয়েছে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের বক্তব্যগুলো আমাদের সমাজ ও জাতির সামনে, দেশের সামনে উপস্থাপন করবে। সেখান থেকে আমরা একটি হারমোনিয়াস পরিবেশের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে পাবো। সব জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের মতামতের ভিত্তিতে একটি ইনক্লুসিভ নতুন সংবিধান তৈরি করবে। কিন্তু সেটি না করে কমিশন শুধু সংস্কার করে দায়িত্ব পালন শেষ করতে চায়। আমরা মনে করি সেটা হলো গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদি নতুন না হয়, আমরা সবাই মিলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
বাংলা ট্রিবিউন: অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দেওয়া উচিত?
নাসির পাটোয়ারী: অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়াটা আসলে তাদের কাজের ওপরে নির্ভর করে। আমরা শুরুতেই বলছি, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা হলো জবাবদিহি ও পর্যালোচনামূলক। সরকারে যারা এসেছেন তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সজ্জন ব্যক্তি। আমরা লক্ষ করছি তাদের কাজের যে মন্থরগতি বা ধীরগতি সে জায়গাটায় যেন না থাকে।
সময় দেওয়ার বিষয়ে আমরা চাই, অতি দ্রুত সময়ে তারা বাংলাদেশকে একটি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত করে, দ্রুত ইলেকশনের মাধ্যমে তারা অব্যাহতি নেবে। আমরা কোনও সময় বলতে পারছি না। তবে দুই বা তিন বছরের মধ্যে তাদের এই কার্যপ্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে। এর অন্যথা হলে তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: নাগরিক কমিটি কোন জায়গাগুলো নিয়ে কথা বলবে? কথা বলার পদ্ধতিটা কী হবে?
নাসির পাটোয়ারী: আমরা স্টেট নিয়ে কাজ করি। স্টেটে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ছোট্ট অংশ। এছাড়াও আরও অনেক অংশ রয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান যে বিষয়টা আমরা দেখেছি, তা হলো জনতার অংশগ্রহণ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিভিল গ্রুপসহ আরও নানান গ্রুপ একটি পেটুয়া বাহিনীর কারণে আন্দোলনে অংশ নিতে পারেনি। সেই জায়গা থেকে নাগরিকরা যেন তাদের আন্দোলনের পরিভাষা তা রাজপথে বা মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারে এবং সরকারের যে কমিশনগুলো রয়েছে, বিভিন্ন রেস্পেক্টিভ যে বডিগুলো রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারে।
এখন আমাদের কথা বলার জায়গা আছে, মিডিয়া রয়েছে, রাজপথ রয়েছে এবং সমাজের মানুষের বিভিন্ন যে চিন্তা ও মত প্রকাশের বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে সেখানে। যে সাংস্কৃতিক ফোরামগুলো রয়েছে, শিল্প-সাহিত্যের যে স্পিরিট রয়েছে এগুলোর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানভিত্তিক দাবিগুলো তুলে ধরবো।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছেন? সেটা আসলে কোন কোন মানদণ্ডে ঠিক করবেন?
নাসির পাটোয়ারী: গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে নিয়েই আগামীর বাংলাদেশ গঠন হবে। যারা এই গণঅভ্যুত্থানে অনেক মানুষকে শহীদ করেছে এবং গত ১৫-১৬ বছর ধরে মানুষের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের আমরা এই বন্দোবস্তে চাই না। আমরা স্পেসিফিক্যালি বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। যারা এখানে অশান্তি সৃষ্টি করবে, তারা যেকোনও দল বা মতাদর্শের হোক, তাদের বাইরে রেখে আগামী বন্দোবস্তের কথা আমরা ভাবছি। তবে সেই মানুষগুলোকে কি আমরা অস্বীকার করবো? না। সেই মানুষগুলোকে আমরা একটা সমন্বয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে এসে জাতীয়ভাবে একটা হারমোনির জায়গায় যাবো।
আগামীর যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হবে তার প্রাথমিক যে শর্ত, সে জায়গা থেকে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী শক্তি এবং তারা, যারা দেশি-বিদেশি সহকারী শক্তি তাদের বাদ দিয়ে আগামী রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা এই জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে পাড়ায়-মহল্লায় কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটা কতটুকু হলো?
নাসির পাটোয়ারী: ৮ সেপ্টেম্বর আমাদের আত্মপ্রকাশের পর আমরা শাহবাগে একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম। যাত্রাবাড়ীতে শহীদ পরিবারগুলোকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছি, আহতদের ফ্যামিলি নিয়ে প্রোগ্রাম করেছি। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমিটি প্রস্তুত। আমরা আমাদের বিভাগীয় যে কমিটিগুলো প্রস্তুত করতে সার্চ কমিটি গঠন করেছি, তারা জেলা লেভেল ও উপজেলা লেভেল পর্যন্ত চলে গিয়েছে, সেই কমিটিগুলোও প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের এখানে আমরা একটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। একটা হলো পলিটিক্যাল দলের সাবস্ক্রিপশনের যে কালচার রয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের ফাইট করতে হচ্ছে। এই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষিত যে শক্তি তাদের সুসংহত করতে হচ্ছে। সে প্রক্রিয়ায় পেশিশক্তির বাইরে গিয়ে জনগণের ভিত্তিমূলক যে রাজনীতি সে সংস্কৃতিতে চালু করে, সেটাও নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নারীর উপস্থিতি অনেক কম। সে জায়গা থেকে আমরা আমাদের কমিটিতে বলেছিলাম ২৫ শতাংশ নারী অবশ্যই থাকলে তারপর আমরা কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় যাবো। সে জায়গায় নারীদের সংগঠিত করে, সুসংহত করে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় যেতে আমাদের কিছুটা সময় লাগছে। অন্যান্য জায়গায় আমাদের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
কমিটির গঠনের পর আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সারা দেশ থেকে কাউন্সিলরদের নিয়ে ভোটের মাধ্যমে আমাদের একটা বডি নির্মাণ করবো, যে বডি আগামীতে বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আমাদের নতুন সংবিধান লেখা, নতুন বাংলাদেশ গঠনে এবং একটি রেজিস্ট্যান্স ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা আত্মপ্রকাশের দিন আট দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন? সেগুলো কতদূর?
নাসির পাটোয়ারী: আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শহীদ ও আহতদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা। আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যারা খুনের দায়ে অপরাধী তাদের শাস্তি নিশ্চিতে কমিটি গঠন করেছি, মামলা করেছি। মামলা পরিচালনা কমিটি শহীদ ও আহতদের ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
আমাদের আরেকটা জায়গা ছিল আহতদের পুনর্বাসনে কাজ করা। সেটি নিয়ে নাগরিক কমিটি ঐকান্তিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কীভাবে স্বাস্থ্য খাততে পুনরুজ্জীবিত করা যায় সেজন্য আমাদের একটা হেলথ কমিটি গঠন করে দিয়েছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য পিজি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছি। সাংবিধানিক যে আলোচনা ছিল, গণপরিসরে সংবিধান নিয়ে আলোচনা, সেটি আমরা বিভিন্ন ফোরামে উঠাচ্ছি।
আমাদের যে কমিটি গঠনের একটা প্রক্রিয়া ছিল সেগুলোর আমরা শেষের দিকে আছি। সব কাজের মধ্যে আমাদের কাজগুলো চলমান রয়েছে।
আমরা আরেকটা বড় একটা কাজ হাতে নিয়েছিলাম, সেটা হলো সামাজিক-ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক জায়গায় গত ১৫-১৬ বছরে নেতৃত্বের জায়গায় যে একটা শূন্যতা বিরাজমান ছিল সে জায়গাটা পূরণ করা। আমাদের ধর্মীয় যে নেতারা আছেন, আমাদের সামাজিক যে নেতারা রয়েছেন, অর্থনৈতিক খাতে যে লিডাররা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত বসছি, মিটিং করছি। সমাজের তরুণ যারা নেতৃত্ব রয়েছেন তাদের লিডারশিপের জায়গায় নিয়ে আসার জন্য শিক্ষিত করে তোলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আরেকটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি চায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আপনারা কীভাবে তৈরি করবেন?
নাসির পাটোয়ারী: আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বেসিক বিল্ডিং ব্লক। সেখানে সমাজের শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন, তাদের মধ্য দিয়ে আমাদের রাষ্ট্র নির্মিত হয়। শিক্ষার প্রক্রিয়াটা সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসগুলোকে শান্ত রাখা জরুরি। গত দুই থেকে তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় টর্চার সেল তৈরি হয়েছে, গেস্ট রুম বা বিভিন্ন দলীয় কার্যালয় পরিণত করার যে কালচার সেখান থেকে বের হয়ে এসে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরির বন্দোবস্তের কথা আমরা বলছি। দলীয় এজেন্ডা বা দলীয় স্লোগানবিহীন এবং দলীয় কার্যালয়বিহীন ছাত্র রাজনীতির প্রচলন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেখতে চাই।
বাংলা ট্রিবিউন: জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দলে রূপ নেওয়ার সম্ভবনা আছে কিনা?
নাসির পাটোয়ারী: আমরা শুরুতেই বলেছি, এটা কোনও রাজনৈতিক দল না, তবে রাজনৈতিক উদ্যোগ। মানুষের মধ্যে এই জিনিসটা ক্ল্যারিফিকেশন অনেক কম যে রাজনৈতিক উদ্যোগ না হয়ে রাজনৈতিক দল কীভাবে হয়। আমাদের দুই থেকে আড়াই শতাংশ মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক মানুষ বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। বাকিরা রাজনৈতিকভাবে উদাসীন। সেই জায়গা থেকে এই বাকি যে জনগোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটি কাজ করে যাবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী ইলেকশনে তরুণদের একটি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে চায় এবং এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর। আগামীতে যে দল ক্ষমতায় আসবে তারাও যদি কোনও ফ্যাসিবাদী আচরণ করে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক কমিটি লড়ে যাবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির অস্তিত্বের জায়গাটা হলো বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা সবসময় পলিটিক্যাল কমিউনিটিতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকে ধূলিসাৎ করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্র একটি সুন্দর রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য কাজ করে যাবে। যেকোনও পরিস্থিতিতে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করে যাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
নাসির পাটোয়ারী: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।