X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
জঙ্গিবিরোধী অভিযান

এবার মাঠে নামছে ডগ স্কোয়াড কে-৯

জামাল উদ্দিন
১৫ জুন ২০১৬, ১৭:৫২আপডেট : ১৬ জুন ২০১৬, ০৯:৫৩

ডগ স্কোয়াড জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধরতে এবার মাঠে নামানো হচ্ছে কে-৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড। এরইমধ্যে নতুন এই স্কোয়াডের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। রাজধানীর রমনা পার্কে বিশেষ মহড়ার মধ্য দিয়ে এই ডগ স্কোয়াড আত্মপ্রকাশ করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) বিভাগের ‘স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিট’- এর সদস্য হিসেবে কাজ করবে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নাশকতা ঠেকাতে ডিএমপির ১০ সদস্যের এই ডগ স্কোয়াড বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনে দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন। কে-৯ নামের এই ডগ স্কোয়াডের সার্বিক তদারকিতেও রয়েছেন তিনি।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও সিসিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন ইউনিটের কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাশকতা প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কাজে কে-৯ বা স্লিপিং ডগ, গার্ড ডগ ও সিকিউরিটি ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করে। ডগ স্কোয়াডগুলোকেই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কে-৯ বলে।

ছানোয়ার হোসেন বলেন, হিউম্যান সার্চ, ম্যানুয়েল সার্চ কিংবা কোনও ডিজিটাল সার্চিং সিস্টেমের ওপর যখন আস্থা রাখা যায় না, সেটা যদি সময় সাপেক্ষ হয় যে, এতো জিনিস এতো অল্প সময়ে সার্চ করা যাবে না কিংবা মিটার রিডিংয়ের ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না, তখনই ডগ স্কোয়াড কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ, হঠাৎ দেখা গেলো সার্চিং মেশিনটি ঠিকমতো রিডিং দিচ্ছে না। অথচ যেখানে তল্লাশি করা হচ্ছিল সেখানে বিস্ফোরকসহ নাশকতার কাজে ব্যবহারের উপকরণ ছিল।

ডগ স্কোয়াড তিনি বলেন, সম্প্রতি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও সেখানে তল্লাশির ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন প্রকট হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে এটি। জঙ্গি আস্তানাগুলোতে যখন আমরা তল্লাশি করি, অনেক ক্ষেত্রেই সেই জায়গাগুলোতে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে রাখা হয় বিস্ফোরক। সে ক্ষেত্রে তল্লাশির জন্য বোম্ব ডিস্পোজাল টিমের সদস্যরা সেখানে যেতে পারেনি। ভয়ে যায়নি। এক্ষেত্রে খুব দ্রুত সময়ে আস্তানার কক্ষগুলোর তল্লাশি শেষ করার জন্য সহজেই এই ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করা যায়। এতে মানুষের ওপর ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।

এডিসি ছানোয়ার বলেন, অল্প সময়ে বেশি তল্লাশি নিশ্চিত করার জন্য কিংবা দূরবর্তী জায়গা থেকে কোনও বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডগ স্কোয়াড বিশেষভাবে কাজে লাগবে। বড় জনসমাবেশ ও জনবহুল এলাকার মধ্যে অনেক মানুষের মধ্যে কেউ শরীরে সন্দেহজনক কিছু বহন করছে কিনা সেটা আলাদাভাবে তল্লাশি করা কখনই সম্ভব নয়। ওইসব ক্ষেত্রে মানুষের ভেতর দিয়ে পেট্রোলিং করে অর্থাৎ হেঁটে হেঁটে কোনও সন্দেহজনক জিনিসকে চিহ্নিত করতে পারবে কুকুরগুলো।

তিনি বলেন, মানুষ কিংবা যন্ত্রের চেয়ে প্রকৃতিগতভাবেই ঘ্রাণ শক্তি দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকেও অনেকগুন বেশি শনাক্ত করতে পারে তারা। গত শতকের শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কুকুরের ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগানো শুরু হয়। এখন পৃথিবীর প্রায় দেশেই কুকুরের এই ঘ্রাণশক্তি কাজে লাগাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় যেমন- বাস স্টপ, রেল স্টেশন ও এয়ারপোর্টগুলোতে যানবাহন ও ব্যাগে গণহারে তল্লাশির বিষয় থাকে। এক্ষেত্রে একজন মানুষ কিংবা একটি যন্ত্র দিয়ে পুরো যানবাহন তল্লাশি করা ও একটি ব্যাগের সব মালামাল উল্টা-পাল্টা করে দেখা সময়সাপেক্ষ, তেমনি হয়রানিমূলক। এই জায়গাগুলোতে যদি কে-৯ ব্যবহার করা যায়, তাহলে দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে। সময়ও লাগবে কম। পুলিশের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে তল্লাশিতে জনগনকে হয়রানি ও বিড়ম্বনা থেকে বাঁচাতেই ডিএমপি ডগ স্কোয়াড গঠন করে।

ডগ স্কোয়াড ছানোয়ার হোসেন জানান, ইংল্যান্ডের একটি ম্যানুয়েল অনুসরণ করে ডিএমপির ডগ স্কোয়াড কে-৯ এর ১০টি কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কুকুরগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। প্রশিক্ষণটা যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় এবং ভুল রিডিং যাতে না দেয়, সাবজেক্ট বা অবজেক্ট চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যাতে ভুল না করে, সেজন্য ইংল্যান্ডের সর্বশেষ ট্রেনিং ম্যানুয়েল দিয়ে সেগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

কুকুরগলোকে যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাদের পাঁচজন ইংল্যাণ্ডে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ১০টি কুকুরের পাশাপাশি তারা ২৫ জন পুলিশ সদস্যকেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

গত ৩০ মে রমনা পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে কুকুরগুলোর। সে ক্ষেত্রে ১০টি কুকুরের মধ্যে আটটি কুকুর সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ঊত্তীর্ণ হয়েছে। বাকি দু’টোকে আরও প্রশিক্ষণ দিলে সেগুলো আরও ভালো করবে বলেও জানান তিনি।

সন্ত্রাস দমনে যেসব দেশ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়, আমাদের ডগ স্কোয়াড নিয়ে বহুমুখী পরিকল্পনায় তারাও আনন্দিত। তারাও আমাদের এই কাজে অংশ নিতে চান। তাই ডগ স্কোয়াড ও তার প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে প্রথম থেকেই সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে ইংল্যান্ড। আমেরিকার ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগশেনও (এফবিআই) এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও কাজ চলছে বলে জানান এডিসি ছানোয়ার।


/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ