X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যাক্সি চালানোর আড়ালে শিশু পাচার!

নুরুজ্জামান লাবু
০৬ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫২আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৪৬

সাহাবুদ্দিন ওরফে সেলিম ওরফে সাহেদ পেশা তার ট্যাক্সি চালানো হলেও মূল উদ্দেশ্য ভিন্ন। ট্যাক্সি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শিশুদের চুরি বা অপহরণ করাই ছিল তার কাজ। এপর্যন্ত অন্তত ১৭টি শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত সে। এর মধ্যে পাঁচটি শিশুকে দেশের বাইরে পাচার করেছে বলে স্বীকার করেছে। নারী ও শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে সে একাই নয়, তার সিন্ডিকেটে রয়েছে আরও অন্তত সাত-আট জন। শিশু পাচারের জন্য পাসপোর্টও করেছিল ছদ্মনামে। সেই পাসপোর্ট দিয়েই বিদেশে যাতায়াত করতো। ১৫ মাসে ছয় বার গিয়েছিল ওমানে। নারী পাচারের সঙ্গেও যুক্ত ছিল সে। নানা প্রলোভন আর বেশি টাকা আয় করার লোভ দেখিয়ে নারীদের নিয়ে যেত ওমানে। সেখানে বিক্রি করে দিয়ে চলে আসতো দেশে।

দুর্ধর্ষ এই নারী ও শিশু পাচার চক্রের মূল হোতার নাম সাহাবুদ্দিন ওরফে সেলিম ওরফে সাহেদ (৪২)। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে তাকে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া সাহাবুদ্দিন ওরফে সেলিমকে ধরতে বেশ কয়েকমাস ধরে অভিযান চালানো হচ্ছিল। সে শিশু পাচারকারী চক্রের মূল হোতা। এর আগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা জিজ্ঞাসাবাদে সাহাবুদ্দিন ওরফে সেলিম ওরফে সাহেদের কথা বলেছে। চুরি বা অপহরণের পর শিশুদের তারা এই সাহাবুদ্দিনের হাতে তুলে দিয়েছে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাহাবুদ্দিন বলেছে, শিশুদের বিদেশে পাচার করার জন্য সে আরেকটি গ্রুপের হাতে দিয়ে দিতো। তাদের কয়েকজনের নামও বলেছে সাহাবুদ্দিন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টার পাশাপাশি সাহাবুদ্দিনকে রিমান্ডে নিয়ে আরও তথ্য জানার জন্য চেষ্টা চলছে।’

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে বায়েজীদ (৮) নামে এক শিশু অপহৃত হয়। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বন্দর থানায় একটি জিডি দায়ের হয়। বায়েজীদের মা বিষয়টি র‌্যাব-১১ এর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর র‌্যাবের একটি দল ১৮ জানুয়ারি ছয় সদস্যের অপহরণকারী চক্রকে গ্রেফতার করে। তারা মোট ১৭টি শিশুকে অপহরণের কথা স্বীকার করে। এরমধ্যে ৯ শিশুকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে বিদেশে পাচার করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। এছাড়া, দুই শিশুকে অচেতন করে রাখতে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহার করার ফলে মারা যায় বলেও স্বীকার করে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা সেসময় জানায়, তাদের এই চক্রের মূল হোতা সাহাবুদ্দিন ওরফে সেলিম ওরফে সাহেদ। শিশুদের অপহরণ করার পর তারা সাহাবুদ্দিনের হাতে তুলে দিতো। বিনিময়ে সাহাবুদ্দিন তাদেরকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতো। এরপরই র‌্যাব কর্মকর্তারা সংঘবদ্ধ এই চক্রের মূল হোতাকে ধরতে কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুরের একাধিক অভিযান চালান।

র‌্যাব-১১ এর একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার সাহাবুদ্দিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশাদার শিশু অপহরণ ও পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রামনগর গ্রামে হলেও বেড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জের চর মুক্তারপুর এলাকায়। আগে সে পেশায় ট্রাক ও টেম্পুর চালক ছিল। ১৯৯৫ সালে সাহাবুদ্দিন তার খালাতো বোনকে বিয়ে করে। সেই সংসারে তাদের দু’টি সন্তান রয়েছে। ১৯৯৯ সালে সে বন্দর থানা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে চার মাস জেল খাটে। পরে ২০০৬ সালে নিজের নাম বদলে সেলিম ছদ্মনামে পাসপোর্ট করে সৌদি আরবে চলে যায়। কিন্তু মাত্র ২৭ দিন পর দেশে ফেরত এসে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার মেট্রো সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি নেয়। সেখানেও ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট আত্মসাৎ করে অন্যত্র বিক্রি করার অপরাধে ফতুল্লা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন সাহাবুদ্দিন পালিয়ে চাঁদপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরে ওই আত্মীয়ের শ্যালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং ২০০৭ সালে পালিয়ে বিয়ে করে। সাহাবুদ্দিন পরবর্তীতে ঢাকায় ট্যাক্সি চালানোর পাশাপাশি শিশু অপহরণ ও পাচারকারী  চক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সাহাবুদ্দিন জানায়, সে ট্যাক্সি চালানোর আড়ালে  জাকির, টিটু, জেসমিন, বানেছা, বেলু ও আসলামকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা পুরনো ঢাকার সদরঘাট, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা হতে শিশু অপহরণ করতো। কখনও অপহৃত শিশুর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতো। যারা মুক্তিপণ দিতো না, তাদের দেশের বাইরে পাচার করে দিতো। সে অন্তত পাঁচটি শিশুকে দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, সাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতারের পর তার জব্দ করা পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানতে পারেন, সে ২০১৪ সালে ছদ্মনামে দ্বিতীয়বার পাসপোর্ট তৈরি করে। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ মাসে মোট ছয় বার ওমানে যাতায়াত করেছে। তবে কোনোবারই  এক মাসের বেশি সময় ওমানে অবস্থান করেনি। এ সময় টাকার বিনিময়ে সে লাকী, আশা ও শিলা নামের তিন নারীকে ওমানে নিয়ে যায়। র‌্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, সে ওমানে নারী পাচারের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারে। এজন্য রিমান্ডে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: 

কণ্ঠশিল্পী মিলাকে মারধরের অভিযোগে স্বামী গ্রেফতার

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
জিপি এক্সিলারেটর বুটক্যাম্প শুরু
জিপি এক্সিলারেটর বুটক্যাম্প শুরু
শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ মহানগর আ. লীগ নেতার
শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্যালাইন ও পানি বিতরণ মহানগর আ. লীগ নেতার
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ ব্যয় নিয়ে সংশয়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থ ব্যয় নিয়ে সংশয়
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে