রাজধানীর বনানী ফ্লাইওভারে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের পেছনে ধাক্কা দিলে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন সিএনজি চালক ছগির আলী (৩৫)। সেই সঙ্গে তার অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী সামান্য আহত হন। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিকাশ পরিবহনের চলন্ত একটি বাস হঠাৎ ব্রেক করায় পেছনে থাকা সিএনজি অটোরিকশাটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের পেছনে ধাক্কা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর ফ্লাইওভারে থাকা অসংখ্য মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ছুটে আসেন। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত সিএনজি চালককে উদ্ধারের চেষ্টা চালান তারা। ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক ব্যক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ওই সময় আহত অটোরিকশা চালকের অনুরোধ ছিল ‘ভাই আমাকে বাঁচান, ভাই। আমারে বাইর করেন, ও ভাই গো আমাকে বাঁচান।’
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় চালককে দ্রুত উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু) তাকে স্থানান্তর করেন চিকিৎসরা। এ ঘটনায় বিকাশ পরিবহনের ওই বাসটি জব্দ করা হয়। চালককেও আটক করেছে পুলিশ।
এদিকে এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের শেওড়া থেকে বনানী ফ্লাইওভার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসকে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানানো হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। আধুনিক সরঞ্জাম (হাইড্রোলিক কাটার ও হাইট্রোলিক রেম জ্যাক) ব্যবহার করে আহত ছগিরকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা মোটরসাইকেল চালক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিকাশ পরিবহনের চালক শেওড়া থেকেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে সড়কে চলছিল। শেওড়ায় একটি মোটরসাইকেল বাসের ধাক্কায় পড়ে যায়। সেই থেকে চালক বাসটি দ্রুত চালাচ্ছিলো। এরপর বনানী ফ্লাইওভারের ওপরে এসে বাসটি হঠাৎ ব্রেক চাপলে এই অটোরিকশাটিতে ধাক্কা লাগে। উদ্ধারের সময় অটোরিকশা চালক বলছিলেন, ‘ভাই আমাকে বাঁচান। আমারে বাইর করেন, ও ভাই গো আমাকে বাঁচান।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. রোমান বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে এই পথে যাচ্ছিলাম। সিএনজি অটোরিকশাটির পেছনে ছিলাম। আর বিকাশ পরিবহনের বাসটি ছিল অটোরিকশার সামনে। ফ্লাইওভারের ওপরে বিকাশ পরিবহনের চলন্ত বাসটি হঠাৎ হার্ডব্রেক করলে অটোরিকশাটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে বাসের পেছনে গিয়ে ধাক্কা খায়। এতে অটোরিকশার সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। চালক সেখানে আটকা পড়েন। তখন আমি দ্রুত নেমে অটোরিকশার গেট টেনে চালককে বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এ সময় আশপাশে থাকা মোটরসাইকেল চালক-আরোহীরা নেমে আসেন। তখন সবাই মিলে চেষ্টা চালাই। না পেরে আমি আমার ব্যাচমেটদের খবর দিই। কিছু সময় পর তারাও ছুটে আসে। আহত যাত্রীদের অপর একটি অটোরিকশা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম চলে আসে।’
তিনি বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা চালক বুঝতে পারেননি এমন ঘটনা ঘটবে। হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তবে এই ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হয়েছে।’
উদ্ধার কার্যক্রমের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুর্মিটোলা স্টেশন অফিসার সুশান্ত কুমার দে মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনাস্থলে দেখি দুমড়ে-মুচড়ে থাকা অটোরিকশার ভেতরে একজন লোক আটকা পড়ে আছে। তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হাইড্রোলিক রেম জ্যাক ও হাইড্রোলিক কাটার ব্যবহার করে আহত অটোরিকশা চালককে উদ্ধার করি।’
ঘটনাস্থলে ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক চাঁদ মিয়া বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজি অটোরিকশা ও বিকাশ পরিবহনের বাসটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভিডিও দেখুন: