দেশজুড়ে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীতে ক্রমেই বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার। কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে যানজটও। জরুরি প্রয়োজনের নানা অজুহাতে ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামানো হচ্ছে। কেউ বলছেন বাজারে যাবো, কেউবা বলছেন ওষুধ কিনতে যাবো। প্রতিটি পাড়া মহল্লাতে বাজার ও ফার্মেসি খোলা থাকার পরও গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্য ভিন্ন। অজুহাত দেখিয়ে কেউ যাচ্ছেন ফাঁকা শহর ঘুরে বেড়াতে, আবার কেউ যাচ্ছেন স্বজন-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।
অযথা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মূল সড়কে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। কিন্তু চেকপোস্ট এড়িয়ে গলিগুলোতে প্রচুর গাড়ি চলছে।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর, শ্যাওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মতিঝিল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কগুলোতে জরুরি সেবার গাড়িগুলোর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। অলিগলিতেও দেখা গেছে মিশ্র দৃশ্য। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত গাড়ির কারণে জটলা দেখা গেছে। আবার কোনও কোনও গলিতে শুনশান নীরবতা। তবে নীরব থাকা এলাকাগুলো বেশিরভাগই লকডাউন। রাস্তার মুখেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন দফতর সীমিত আকারে চালু থাকার পাশাপাশি অলিগলির দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানোর কারণে মানুষ রাস্তায় বেশি সময় থাকতে পারছে। যাদের প্রয়োজন রয়েছে তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করছেন, কিন্তু কিছু মানুষ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘুরাফেরা করেন বলে জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
গত ২৬ মার্চ থেকে রাজধানীতে লকডাউন পরিস্থিতি শুরুর পর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, রাস্তায় বের হওয়ার জন্য মানুষ নানা কৌশল ব্যবহার করছে। কেউ গাড়ির সামনে জরুরি ওষুধ সরবরাহের ব্যানার লাগিয়ে বের হচ্ছে, কেউ পকেটে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বের হচ্ছে। আমরা যখন আটকিয়ে জিজ্ঞেস করছি, বলছে ওষুধ কিনতে যাচ্ছি। তখন তো কিছু বলার থাকে না। যেকোনও গলির ফার্মেসিতে যে ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় তা কিনতেও চেইন ফার্মেসিতে যাচ্ছে বলে জানায়।
সারওয়ার আলম বলেন, অযথা যারা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যারা বের হচ্ছে তাদের আমরা জরিমানা করছি। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট দিনের জন্য গাড়ি জব্দ করে রাখছি। লকডাউন ভেঙে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রাইভেট কার নিয়ে একজন ঢাকায় চলে এসেছিলেন। যেতে চাচ্ছিলেন গাবতলী। আমরা তাকে আটকাই চানখারপুল এলাকায়। গাড়িটিতে জরুরি ওষুধ সরবরাহ লেখা ব্যানার লাগানো ছিল। তবে ওষুধ সংশ্লিষ্ট কোনও কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। আমরা তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও গাড়িটি এক মাসের জন্য জব্দ করেছি। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই সচেতন করার পাশাপাশি যারা আইন অমান্য করছেন, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।
ডিএমপি ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সহকারী কমিশনার (তেজগাঁও) কাজী মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা প্রধান সড়কে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছি। কিছু মানবিক বিষয় থাকে, সেটাও দেখতে হয়। কেউ হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলছেন। ওষুধ কেনার কথা বলছেন। আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হলে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম।