X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

করোনায় ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ চলতে পারে যেভাবে

বাহাউদ্দিন ইমরান
০২ মে ২০২০, ১৯:৫৩আপডেট : ০৩ মে ২০২০, ০৪:৪০

আদালত

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বন্ধ রয়েছে দেশের আদালত ব্যবস্থাপনা। এর ফলে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়েছেন আইনজীবী ও সাধারণ বিচার প্রার্থীরা। তাই উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল কোর্টের প্রতি আগ্রহ আইনজীবীদের। আর সে কোর্ট ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।
আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার ভঙ্গের আবেদন জানানোর (সুপ্রিম কোর্টে) সুযোগ না দেওয়াও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। তাছাড়া এ মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে আগের মতোই কোর্ট চালানো প্রায় অসম্ভব। আর তাই বলে কী এ সময়ের মধ্যে জনগণের মৌলিক অধিকার কী সাসপেন্ড রাখা যায়? অন্তত দু-একটি কোর্ট এসময় অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতেই পারে।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনায় সুপ্রিম কোর্টে সাধারণ ছুটি থাকার কারণে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার সাংবিধনিক সুযোগ রুদ্ধ হয়ে গেলো। দেশে জরুরি অবস্থাও জারি নেই। তাই নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার বলবৎ করার সুযোগ একেবারে বন্ধ থাকা উচিত নয়। এ জটিলতা নিরসনে কার্যকর বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে অনলাইনে। অন্তত একটি বা দুটি রিট বেঞ্চ অনলাইন ভিত্তিক চালু করা নিতান্তই প্রয়োজন। এ বিষয়ে আইটি বিশেষজ্ঞদের মতামত সব জটিলতার অবসান করবে বলেও এই আইনজীবী মনে করেন।

যেমন হতে পারে ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতি:

ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতির বিষয়ে নিজের গবেষণাধর্মী মতামত তুলে ধরেছেন আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম। এগুলো হলো:

১.অনলাইন বেঞ্চ চালুর জন্য প্রথমেই একটি সিস্টেম ডেভেলাপ করা দরকার এবং গোটা সফটওয়্যারটি সহজে ব্যবহার করার সুযোগ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের এটুআই যে প্রজেক্ট থেকেও সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

২. অনলাইনে মামলার আবেদনের নথিটি পিডিএফ আকারে ভার্চুয়াল কোর্টে দাখিলের সুযোগ রাখতে হবে এবং আলাদা করে এনেকচার অনুলিপি পিডিএিফ বা জেপিজি ফরমেটে দেয়ার সুযোগ রাখতে হবে। অনলাইনে ফাইল করার পর অটো একটি মামলা নাম্বার পড়বে। সেখানে অপশন থাকবে, আইনজীবী মামলাটি কোন বেঞ্চে দাখিল করতে চান। এর আগে তদবীরকারের আইডি কার্ড ভেরিফিকেশনের জন্য একজন কর্মকর্তা অনলাইনে চেক করে কনফার্ম করবেন। তিনি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদ্বয়ের কাছে রেফার করবেন ইমেইলে বা সংযুক্ত অন্য কোনও পদ্ধতির মাধ্যমে। সেখানে আইনজীবী কর্তৃক মামলার বর্তমান স্ট্যাটাস জানার জন্য একটি অপশন রাখতে হবে।

৩. মামলা ফাইল করার পর সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছেও একটি কপি ইমেইলে প্রদান করার ব্যবস্থা থাকবে। যদি রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য দিতে চায় তাহলে তিনিও লিখিতভাবে সাবমিশন অনলাইনেই দাখিল করতে পারেন। প্রয়োজনে বিচারপতিদ্বয়, রিটকারি আইনজীবী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একত্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি করবেন।

৪. বিচারপতিগণ নিজেরা এ বিষয়ে আলাপ করে নিতে পারেন এবং আদেশ দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে আবেদনকারী আইনজীবীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে এসে ভিডিও কনফারেন্স কলে শুনানির সময় ঠিক করে দিতে পারেন।

৫. কোনও আদেশ হলে দুই বিচারপতি তাদের বেঞ্চ অফিসারের নিকট পাঠাবেন, আদেশের ডিক্টেশন দিয়ে। টাইপ হওয়ার পর দুই বিচারপতি ইলেকট্রনিক সিগনেচার দিয়ে আদেশটি অনলাইনে পাঠাবেন। তখন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সেটি সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট বাদী-বিবাদীদের সরবরাহ করতে পারবেন। তবে প্রশ্ন আসতে পারে রুলের রিকুজিট কীভাবে জমা দিবে। এক্ষেত্রে যেহেত বিষয়টি অনলাইনে থাকবে, তাই রিকুজিট জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিবাদীদের নিকট ইমেইলে আদেশের কপি সরবরাহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রেজিস্টার অফিসের কর্মকর্তার ভেরিফিকেশন থাকতে পারে।

৬. একটি বার কোড ব্যবহার করতে হবে। যাতে করে আদেশের বিষয়ে সত্যতা যাচাই করার সুযোগ থাকে।

৭. কম্পিউটার এবং অনলাইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারপতিদের সমন্বয়ে অনলাইন বেঞ্চ গঠন করে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৮. আদালতের ছুটি শেষ হলে প্রয়োজনে মামলার হার্ডকপি সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিলের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে এবং সেখানে আলাদা ক্রমিক দেয়া থাকবে, যাতে উল্লেখ থাকবে মামলাটি অনলাইন ভিত্তিক বেঞ্চে কার্যক্রমে পরিচালিত হয়েছে। এছাড়াও মামলার রুল শুনানির সময় স্বাভাবিক কার্যক্রমই চলতে পারে। 

বিশ্বের বেশ কিছু আদালতের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য, চীন, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে বেশিরভাগ মামলা অনলাইনে এবং শুনানি ভিডিও কনফারেন্সে পরিচালনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্কাইপ কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপসের ব্যবহার করছে তারা।

একই বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্যের মত উন্নত দেশের পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতি চালু রয়েছে। আমাদের দেশেও একসময় এই ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে হবে। তবে, সেই কাজের শুরুটা এখনই নয় কেন? করোনা বা এর মতো আসন্ন অন্য কোন অন্যান্য মহামারী, দুর্যোগের সময় অনলাইন কোর্টের প্রয়োজন অপরিহার্য। তা না হলে, ভবিষ্যতের দিনগুলো আমরা কিভাবে জরুরি পরিস্থিতির মোকাবেলা করবো তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে।

 

/বিআই/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট