X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ জুন ২০২০, ০০:২৫আপডেট : ১০ জুন ২০২০, ০২:৪৭

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘনত্ব বিবেচনায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, 'আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। এখন এই এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং কাউকে প্রবেশ করতেও দেওয়া হবে না।'

লক ডাউনের প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব বিজয় তালকুদার জানান, কোভিড-১৯ রোগটি ছড়ানোর ক্ষমতা সাধারণত ১৪ দিন ধরা হয়। এই কারণে পূর্ব রাজাবাজারে আপাতত ১৪ দিন চলাচল বন্ধ থাকবে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না হলে ২১ দিন পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থা থাকতে পারে। 

এদিকে এই এলাকার লকডাউন বিষয়ক ঘোষণা আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে বুধবার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেককে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার রাত ১০টা দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব রাজাবাজার মসজিদ গলির শেষ মাথায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা আছে- 'করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষামূলক রেড জোন চিহ্নিত করে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবেশ নিষেধ।'

অপরদিকে গ্রিন রোডে অবস্থিত আইবিএ হোস্টেলের পাশের সড়কের প্রবেশপথও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই পথ দিয়ে চলাচলরত সাধারণ নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাত ১২টার পর এই সড়ক দিয়ে আর কেউ বের হতে পারবেন না। পাশাপাশি প্রবেশও করতে পারবেন না। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই পথ দিয় বাসার মালামাল ভর্তি একটি ট্রাক বের হতে দেখা যায়। জানতে চাইলে ওই ট্রাকটির চালক জানান, লকডাউনের কারণে তারা আতঙ্কিত রয়েছেন। তাই বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কারণ এই এলাকায় থাকলে তারা বের হতে পারবেন না, ফলে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করতে সমস্যা হবে।

 

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই

এদিকে ওই এলাকার প্রধান সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাসা-বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। তবে তখনও দুয়েকটি দোকান খোলা দেখা যায়। আরও দেখা যায়, কেউ কেউ তাদের দোকানপাটের মালামাল গুছিয়ে রাখার কাজ করছেন।

জানতে চাইলে সালেহা স্টোরের মালিক রিয়াদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, '১২টার মধ্যেই দোকান বন্ধ করে ফেলবো। কাল থেকে তো আর দোকান খোলা রাখা যাবে না। আসলে বলতে পারছি না কী হয়, কারণ দোকানে যেসব মালামাল আছে এগুলোর অধিকাংশই পচনশীল। আর ইঁদুরে তো নষ্ট করবেই। সে কারণে ভয় হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এলাকা থেকে অনেকেই চলে গেছেন। আসলে এত দিন লকডাউন এটা কেউ মানতে পারছেন না।'

ইয়াছিন আরাফাত নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই এখানকার একটি বাড়িতে মেস বানিয়ে রয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন। সে কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঢাকার অন্য এলাকায় আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের বাসায় চলে গেছেন।

নাজিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাড়ির মালিক বলেন, 'সরকার নিশ্চই ভালোর জন্যই এটা করেছে। আমরাও চাই এই লকডাউন যাতে আগের মতো না হয়, সঠিকভাবে কার্যকর করে যদি এলাকাবাসীকে রক্ষা করা যায় তাহলে আমার মনে হয় কোনও সমস্যা হবে না।'

জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আমাদের সব প্রস্তুতি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দুই দিকেই সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বেরও হতে দেওয়া হচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আসলে লকডাউন কী জিনিস তা এখনও বুঝতে পারছে না মানুষ। অনেকেই বের হয়ে গেছে এটা সত্য। কিন্তু আমি এখন থেকে অনেক কঠোর হয়েছি। কাউকে কোনও পাস দেওয়া হচ্ছে না।'

লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান বলেন, 'এই এলাকার জন্য আমাদের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মধারী শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এলাকার ভেতরে রাস্তা বিবেচনায় রেখে মোটরসাইকেল পেট্রোলিং ও ফুট পেট্রোলিং (পায়ে হেঁটে)-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুলিশের অপারেশনাল গাড়িগুলো দিয়ে এলাকায় টহল দেওয়া হবে।'

এদিকে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি স্প্রেডিং বন্ধের জন্য সেনাবাহিনী কঠোর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেজর মুসফিক। পূর্ব রাজাবাজার এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, 'সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কমিউনিটি স্প্রেডিং বন্ধের জন্য আমরা হার্ড লাইনে যাচ্ছি।' পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় দুটি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ রোগটি ছড়ানোর ক্ষমতা সাধারণত ১৪ দিন ধরা হয়। এ কারণে পূর্ব রাজাবাজার আপাতত ১৪ দিন লকডাউন বন্ধ থাকবে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না হলে ২১ দিন পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থা থাকতে পারে।

 আরও খবর: 

পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন রাখতে নামছে সেনাবাহিনী

পূর্ব রাজাবাজারে চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ

পূর্ব রাজাবাজারে যেভাবে মানা হবে লকডাউন

 

 

 

 

/এসএস/আরজে/এএইচ/এফএএন/
সম্পর্কিত
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
সর্বশেষ খবর
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড