X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজেন্ট ও জেকেজি’র প্রভাবশালী সহযোগীদের শাস্তির দাবি টিআইবির

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৫ জুলাই ২০২০, ২২:২৮আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২০, ২২:৩৩

টিআইবি

করোনা শনাক্তের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে রিজেন্ট ও জেকেজি’র  জালিয়াতির ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংগঠনটি  বলেছে, স্বাস্থ্য খাতে লাগামছাড়া দুর্নীতির খুবই ছোট  উদাহরণ এই দুটি প্রতিষ্ঠান। তারা যেসব প্রভাবশালীর সঙ্গে যোগসাজশে এই জালিয়াতি ঘটিয়েছে, গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর সাজা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (১৫ জুলাই) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দাবি জানায় টিআইবি। রিজেন্ট ও জেকেজিকাণ্ডের মূল হোতাদের আটকের ঘটনাকে এসব দুর্নীতি তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘দেশে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে একের পর এক দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সাগরচুরির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। তার মধ্যে মাত্র দু’টি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রত্যক্ষ কর্ণধারদের আটক করা হয়েছে এবং তাকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরাট অর্জন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা অবশ্যই এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এখনই একে বিরাট সাফল্য বলে মানতে পারছি না। যে প্রক্রিয়ায় আলোচ্য দু’টি প্রতিষ্ঠান এই জালিয়াতি করার সুযোগ পেয়েছে, তাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। অভিযুক্তদের শুধু ‘প্রতারক’ হিসেবে প্রচার করে এর পেছনে থাকা প্রভাবশালী, যারা তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন একেবারে অবান্তর বলা যাচ্ছে না।’’

আলোচিত দুই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বেশ কদিন হলো এই অভিযোগের বিষয় দু’টি সামনে এসেছে। এতদিনে তো উচিত ছিল কী প্রক্রিয়ায়, কীভাবে, কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছিল তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া, কোন কর্তৃপক্ষের কতটুকু দায়িত্বে অবহেলা ছিল তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তা না করে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে, কর্মকর্তারা ‘মন্ত্রীর অনুরোধে’ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন। অধিদফতর বলছে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ‘মৌখিক নির্দেশনায়’ তারা চুক্তি করেছে। আর  মন্ত্রী জানিয়েছেন ‘তিনি অনেক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, সব পড়ে দেখেন না’। এই যদি হয় জনস্বার্থে সরাসরি সংশ্লিষ্ট সরকারের অন্যতম প্রধান একটি বিভাগের চালচিত্র, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে উপায় থাকে না। মহামারির এই ভয়াবহ সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন লাগামছাড়া, ছন্নছাড়া অবস্থা রীতিমতো অপরাধমূলক। কারণ, এটাতো শুধু দুর্নীতির মহোৎসব নয়, মানুষের জীবন-মৃত্যু এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।”

স্বাস্থ্য খাতের এই যথেচ্ছ দুর্নীতির দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে এবং টিআইবি মনে করে, এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এরই মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অ্যাপ তৈরির প্রস্তাবনার মতো জালিয়াতির ঘটনা প্রায় ধামাচাপা পড়ে গেছে। আর অভিযুক্তরাও বহাল তবিয়তে আছে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

রিজেন্ট ও জেকেজি কেলেঙ্কারি দিয়ে দুর্নীতির অন্যসব অভিযোগ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে নির্বাহী পরিচালক বলেন, “বাংলাদেশে এমন একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে যে, দুর্নীতির অভিযোগে হাতেগোনা দুই-একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো তৎপর হয়। অথচ দুর্নীতির মহাসমুদ্রে এসব চুনোপুটিরা ডুবে থাকা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, দৃশ্যপট থেকে যাদের সরিয়ে দেওয়ায় দুর্নীতির পেছনের মূল সংঘবদ্ধ চক্রটির কোনও ক্ষতি  হয় না, বরং তাদের হাতেই দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়। চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে বড় বড় রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়, আর  দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। তাই শুধু দুই-তিন জন অভিযুক্তকে আটকেই এই ঘটনার সমাপ্তি না টেনে বরং তাদের ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পেছনের প্রভাবশালী কুশীলব, সুরক্ষাদাতা, সমর্থনদাতা এবং সুবিধাভোগীদেরও অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তাদের অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে— এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশবাসী। এটা না হলে দুর্নীতির মূলোৎপাটন কখনোই সম্ভব হবে না।”

 

/আরজে/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ