X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কওমি মাদ্রাসাগুলো কি আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানবে?

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৭ আগস্ট ২০২০, ২২:৫৯আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২০, ২৩:৩৯

কওমি মাদ্রাসায় পাঠ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা দেশে করোনাভাইরাস মহামারির আগে থেকেই ওয়াজ মাহফিল, জুমার বয়ানসহ নানা জায়গায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে গেছেন কওমিপন্থী আলেমরা। ‘মুসলমানরা  করোনা আক্রান্ত হবেন না’, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই’—এমন বক্তব্য দিয়েছেন তারা। বেশিরভাগ কওমিপন্থী আলেমরা সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মানেন না, ব্যবহার করেন না মাস্ক। যদিও সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে কওমি মাদ্রাসাগুলো খোলার অনুমতি দিয়েছে। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

খোলার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই কওমি মাদ্রাসাগুলো খোলার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন কওমিপন্থী আলেমরা। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে—এমন অজুহাতে ঈদের আগেই মাদ্রাসার খোলা দাবি জানিয়েছ আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কওমিপন্থী আলেমদের একটি অংশ তৎপরতা চালিয়ে আসছিল কোরবানি ঈদের আগেই মাদ্রাসা খোলার। এমন দাবির মুখে দেশের  সব হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও হিফজখানা ১২ জুলাই থেকে চালুর অনুমতি দিয়েছিল সরকার। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট সচিবালয়ে জাতীয় দীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাদ্রাসার কিতাব বিভাগ খোলার দাবি জানান।  পরবর্তীতে ২৪ আগস্ট মাদ্রাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি দেয় সরকার।

বরাবরই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত  সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীন কওমিপন্থী আলেমরা। তাদের বৃহৎ অংশ স্বাস্থ্যবিধি মানেন না, ব্যবহার করেন না মাস্ক। কওমি মাদ্রাসারা সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেছে তারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, ব্যবহার করছেন না মাস্ক। এমনকি অনেক মাদ্রাসা সরকারে অনুমতির আগেই খোলা হয়েছে। কোরবানি ঈদের দিন সকাল থেকে পথে পথে দেখা গিয়েছিল কওমি মাদ্রাসার শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের। বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত তারা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আলেম বলেন, মাদ্রাসায় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। যেখানে ছাত্রদের বসার, থাকার জায়গা নেই, সেখানে কীভাবে ৩ ফিট দূরত্ব মানা হবে। মাদ্রাসাগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশি ভালো নয়, ফলে মাদ্রাসার অর্থে ছাত্রদের জন্য স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হবে, মাস্ক দেওয়া হবে—এটাও আশা করা যায় না। আলেমদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেন না। অনেক মাদ্রাসা সরকারের ঘোষণার আগেই খোলা।

জাতীয় দীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ওজু করেন, আল্লাহর কোরআন, নামাজ, তেলওয়াতের মধ্যে থাকেন। তাদের প্রতি নিশ্চয় আল্লাহর বিশেষ রহমত আছে, তাদের খারাপ কিছু হতে পারে না। হেফজ বিভাগ খোলা হয়েছে আরও আগে। সেসব মাদ্রাসায় কোনও আক্রান্তের খবর নেই। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর নিয়ন্ত্রণাধীন দারুল উলুম হাটহাজারিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে সরকারের অনুমতি প্রদানের আগেই। আহমদ শফী একই সঙ্গে কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি এবং আল হাইআতুল উলয়া লিল- জামিআতিল কওমিয়ার চেয়ারম্যান। 

কওমি মাদ্রাসারা কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতির আদেশে বলা হয়েছে, কওমি মাদ্রাসাগুলোর কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হলো। তবে ৬টি শর্ত পালন করতে হবে মাদ্রাসাগুলোকে। শর্তগুলো হলো: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মাথায় নিরাপত্তা টুপি পরা আবশ্যক। মাদ্রাসায় প্রবেশের পূর্বে গেটে স্যানিটাইজিং করতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে, বিক্ষিপ্তভাবে চলাফেরা করবে না। একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষার্থী থেকে কমপক্ষে ৩ ফিট দূরত্বে অবস্থান করবে। করোনার কারণে কোলাকুলি ও হাত মেলানো যাবে না। শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একইভাবে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস করাবেন।

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে একটি মাদ্রাসা কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন ইসলামী আন্দোলনের মজলিসে আমেলার সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীম। তিনি নিজেও দেশের একাধিক মাদ্রাসা পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সোমবার দলটির প্রচার বিভাগ থেকে প্রেস রিলিজে বলা হয়, দলের এক সভায় মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ায় সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেই সভার ছবিতেও দেখা গেছে, মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি, কারও মুখে নেই কোনও মাস্ক।

এছাড়াও আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, বেফাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকসহ অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন, যেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না।

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সকল মাদ্রাসাকে বলা হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম না মানে তবে প্রশাসন যেকোনও ব্যবস্থা নিতে পারে তাদের বিরুদ্ধে।

মাদ্রাসায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ প্রসঙ্গে যোবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কোথায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়? মাদ্রাসা কেন, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষেও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্ভব হবে না। তবে সবাইকে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে। কেউ যেন নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে না দেন।

যোবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, তবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বাইরে যায় না, একই জায়গায় অবস্থান করে, অনেকটা কোয়ারেন্টিনের মতো। ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে এখানে সংক্রমণের ঝুঁকি কম।

 

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
উচ্চশিক্ষার মানের বৈষম্য নিরসনের আহ্বান ইউজিসির
একাদশে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সর্বশেষ খবর
শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ৩০ দিনের মধ্যে ফেরতের দাবি
শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ৩০ দিনের মধ্যে ফেরতের দাবি
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
পুলিশের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে: আইজিপি
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
সংকট থেকে উত্তরণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান মেননের
কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
কান উৎসব ২০২৪কানে ঝুলছে বাংলাদেশের দুল!
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?