X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যে ভেজাল, কী বলছে ইসলাম?

বেলায়েত হুসাইন
০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০০

একজন মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে খাদ্য অপরিহার্য। মহান আল্লাহ তায়ালাও পৃথিবীতে আমাদের নানা ধরনের সুন্দর-স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দান করেছেন। কিন্তু আমরা এখন এমন এক কঠিন সময় পার করছি, যখন সংগ্রাম করেও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার জোগাড় করতে পারছি না। ভেজাল খাদ্যে সয়লাব গোটা পৃথিবী, আর আমাদের দেশটা যেনো তার কেন্দ্র। ‘খাঁটি’র মোড়কে এখানে চলছে ভেজালের ‘বিপ্লব’।

সাধারণত অধিক মুনাফা লাভের জন্য ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা খাদ্যে ভেজাল মেশান। যেমন- খাদ্যপণ্যকে আকর্ষণীয় করতে নানা ধরনের রঙের মিশ্রণ, মধুতে চিনি, মাছ-মাংস-সবজি উজ্জ্বল রাখতে ফরমালিন, এমনকি এখন শোনা যাচ্ছে— প্লাস্টিকের ডিম-চাল ইত্যাদিও বাজারে এসেছে। একইসঙ্গে ‘খাঁটি’ আখের গুড়ের কারখানায় আখের কোনও উপাদান না থাকা প্রভৃতি— এ হচ্ছে কয়েকটি ভেজালের অতি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। তালিকা করলে বিরাট আকৃতি ধারণ করবে।

অথচ ভেজাল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভেজাল খাবারে মানুষের শরীরে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিও বাসা বাঁধছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের আশপাশের মানুষ ও স্বজন। কিন্তু আমাদের সেদিকে খেয়াল নেই, আমরা পড়ে আছি মুনাফায়। মানবতাবিরোধী এ অপরাধের বিরুদ্ধে ইসলামেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। পণ্যে ভেজাল মেশানোতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্ষতি, তা তুলে ধরা হলো:

ভেজাল পণ্যের ব্যবসায়ী মহাপাপী

সৎ ব্যবসায়ীর সম্মান বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস ১২০৯) পক্ষান্তরে ব্যবসায়ী যদি তার ব্যবসায় সততা অবলম্বন না করে, তাহলে হাদিসে তাকে মহাপাপী আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের মহাপাপীরূপে ওঠানো হবে, তবে যারা সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছে তারা ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ১২১০)

খাদ্যে ভেজাল মেশানো ধোঁকা ও প্রতারণা

ইসলামে ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা নিষিদ্ধ। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া মানে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করা। ধোঁকা প্রসঙ্গে হাদিসে হুঁশিয়ারি এসেছে। হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার রাসুল (সা.) বাজারে এক খাদ্যস্তূপের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তূপের ভেতরে হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভেতরের খাদ্যগুলো ভেজা। তিনি খাদ্য বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, এটি কেমন কথা? সে বললো, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলো ওপরে রাখোনি কেন, যাতে মানুষ দেখতে পেতো। অতপর মহানবী (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১০২) একইসঙ্গে খাদ্যে ভেজাল দিয়ে যে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা হয়, তা অবৈধ পন্থায় অর্জিত হয়েছে, আর অবৈধ পন্থায় অন্যের সম্পদ ভোগ করা হারাম। পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৮)

খাদ্যে ভেজাল মেশানো ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না

মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য হলো— তাঁর ইবাদত করা। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত: আয়াত ৫৬) অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, হারাম ভক্ষণকারীর ইবাদত কবুল হয় না। খাদ্যে ভেজাল দিয়ে ব্যবসায়ী যে অর্থ উপার্জন করে, তা নিঃসন্দেহে হারাম। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলো-মলিন দেহ নিয়ে আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দোয়া করে বলে, হে আমার রব! বলে দোয়া করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম। যা পান করে, তা হারাম। যা পরিধান করে, তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তবে তার মোনাজাত কীভাবে কবুল হতে পারে!’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)

সৎ ব্যবসায়ীর পুরস্কার

আমরা যদি ধোঁকাবাজি ছেড়ে সততার সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি, তাহলে আল্লাহ আমাদের বিরাট প্রতিদান দেবেন। সৎ ব্যবসায়ীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। একইসঙ্গে সৎ ব্যবসায়ীদের গুণাগুণ বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর জিকির, সালাত কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিগুলো উল্টে যাবে। (তারা এভাবে আল্লাহর ইবাদাত করে) যাতে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করেন তাদের উত্তম কার্যাবলী অনুসারে, আর নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন, কারণ আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন অপরিমিত রিজিক দান করেন।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৭, ৩৮)

আমরা পরিপূর্ণ মুসলিম হলে খাদ্যে ভেজাল কমবে

খাদ্য ও পণ্যে ভেজাল না দিতে সরকারের নানা পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমরা যদি সবাই পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করি, আশা করা যায়, তাহলে সমাজ থেকে ভেজাল অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। কারণ, একজন প্রকৃত মুসলিমের গুণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে— মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমান তাকে বলা হবে ওই ব্যক্তিকে, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুমিন হলো ওই ব্যক্তি, যার পক্ষ থেকে অন্য মানুষের প্রাণ ও সম্পদের কোনো শঙ্কা না থাকে। (বুখারি, হাদিস: ১০) আল্লাহ আমাদের সবাইকে খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানো থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করেন এবং আমরা সবাই যেন মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিম ভাই-বোনের ক্ষতির কারণ না হই। আমিন।

লেখক: শিক্ষক- মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ ঢাকা

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা