X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে কোরআন তিলাওয়াতে যেমন গুরুত্ব দেওয়া উচিত

শায়েখ সাদ সাইফুল্লাহ মাদানী
১৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৪আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৪

রমজান কোরআন নাজিলের মাস। রমজানের রোজা রেখে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ক্ষমা ও রহমত কামনা করার রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন তিলাওয়াত করার সময় আল্লাহর কাছে যেমন রহমত কামনা করতেন, আবার তার আজাব থেকে নাজাতও চাইতেন।

পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজান মাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে রমজানের মাহাত্ম্য বর্ণনা ও পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে ঐশী গ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন-

 شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ

‘রমজান মাস হলো সেই মাস যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে’, (সূরা-বাকারা: ১৮৫ )

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনের মতো একটি মহাগ্রন্থ নাযিল করার জন্য এই মাসটিকে বেছে নিয়েছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় রমজান মাসের মর্যাদা কত বেশি।

লাওহে মাহফুজ থেকে এই মাসের এক বরকতময় রাতে পুরো কোরআন পৃথিবীর আসমানে একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন-

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ اِنَّا کُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ

‘আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান: ৩) অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন,

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ

‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি লাইলাতুল ক্বদরে।’( সূরা কদর: ১ )

অর্থাৎ এই আয়াতটি শবে কদরের মাহাত্ম্য বর্ণনা করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে আর এই রাতটিকেই আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন।

এই কারণেই পবিত্র কোরআনের সাথে সম্পর্ক রেখে রমজানের ইবাদতকে শরিয়ত সিদ্ধ (বৈধ) ঘোষণা করা হয়েছে।

কোরআনুল কারিম সময়ের ব্যবধানে প্রয়োজনের আলোকে অল্প অল্প করে দীর্ঘ ২৩ বছরে নাজিল হলেও আল্লাহ তাআলা প্রতি রমজানের প্রত্যেক রাতে হযরত জিবরিল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পুরো কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। আবার নবিজীও প্রত্যেক রমজানে জিবরিল আলাইহিস সালামকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। (বুখারি) এ হাদিস থেকে রমজানে বেশি থেকে বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়।

রমজানে কোরআন তিলাওয়াত করা এবং তা অধ্যয়নের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

 یٰۤاَیُّهَا الۡمُزَّمِّلُ -  قُمِ الَّیۡلَ اِلَّا قَلِیۡلًا -  نِّصۡفَهٗۤ اَوِ انۡقُصۡ مِنۡهُ قَلِیۡلًا -  اَوۡ زِدۡ عَلَیۡهِ وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا

‘হে বস্ত্রাবৃত! রাত জাগরণ করুন, কিছু অংশ ছাড়া। অর্ধরাত কিংবা তার চেয়ে অল্প অথবা তার চেয়ে বেশি। আর কোরআন তিলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে, সুস্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-৪)

ঐশী গ্রন্থ আল কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। এর তিলাওয়াতে প্রতি হরফে ১০টি করে সাওয়াব/নেকি লাভ করা যায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করলো, তার জন্য রয়েছে একটি নেকি। আর একটি নেকি ১০টি নেকি সমতুল্য। আমি বলছি না, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ (তিরমিজি)

কোরআন নাজিলের মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়ার একটি মাধ্যম। এটি শুধু পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ বরকত। আমরা উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় এ কথা বুঝতে পারলাম যে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কোরআন তিলাওয়াত করার এ নির্দেশনা মুসলিম উম্মাহর জন্যও প্রযোজ্য। আর এতেই রয়েছে অনেক বেশি কল্যাণ। এ কারণেই হাদিস শরিফে কোরআন তিলাওয়াতকে ‘আফদালুল ইবাদাত বা সর্বোত্তম ইবাদত’ বলা হয়েছে।

অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের সওয়াব বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ, রমজান মাসের নফল ইবাদত অন্য মাসের ফরজ সমতুল্য। আর ফরজ ইবাদতও অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমতুল্য।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআন তিলাওয়াতের সময় আল্লাহর আদেশ-নিষেধ সম্পর্কিত সব বিষয়ের ওপর আমল করতেন। হাদিসে পাকে সে বর্ণনা ওঠে এসেছে-

হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রাতে নামাজ আদায় করছিলাম তখন, (১.) তিনি খুবই ধীরস্থিরভাবে কোরআন তিলাওয়াত করলেন। (২.) তিলাওয়াতে যখন তাসবিহ’র আয়াত আসলো তখন তিনি তাসবিহ আদায় করলেন। (৩.) যখন কোনও নিয়ামতের বর্ণনা আসলো তখন তিনি আল্লাহর কাছে নিয়ামত প্রার্থনা করলেন। (৪.) যখন কোনও আজাবের আয়াত আসলো তখন তিনি আল্লাহর আজাব থেকে পানাহ/আশ্রয় চাইলেন।’

সুতরাং মু'মিন মুসলমানের উচিত, কোরআন নাজিলের মাস রমজানে নবিজীর শেখানো পদ্ধতিতে কোরআন তিলাওয়াত করা। কোরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। কোরআনে ঘোষিত নিয়ামত পাওয়ার চেষ্টা করা। কোরআনের ঘোষিত আজাব থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। কোরআনের হুকুম-আহকাম যথাযথভাবে মেনে চলার চেষ্টা করা।

কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য পবিত্র কোরআন সুপারিশ করবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের হক আদায় করে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের হেদায়েত দিয়ে নিজেদের আলোকিত করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: মহাসচিব, আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশ; মুহতামিম, মাদরাসা উম্মুল কুরা লি-উলুমিল কোরআন বাংলাদেশ; মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক ক্বিরাত ইনস্টিটিউট।

/এফএস/
সম্পর্কিত
আজ ঈদ
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ